শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

ইবনে তাইমিয়ার দৃষ্টিতে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা জায়িয ও মুস্তাহাব

[মুফতী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী’র ‘তাকলীদ-এর সুদৃঢ় রজ্জু’ থেকে]
গায়র মুকল্লিদগণ হাফিয ইবনে তাইমিয়ার অনুসরণ করেন বলে দাবি করেন অথচ ইবনে তাইমিয়া মৃতের তালকীন সম্পর্কে বলেন-
وروى في تلقين الميت بعد الدفن حديث فيه نظر، لكن عمل به رجال من أهل الشام الأولين، مع روايتهم له، فلذلك استحبه أكثر أصحابنا وغيرهم. (إقتضاء الصراط المستقيم)
অর্থাৎ মৃতের দাফনের পর তালকীন সম্পর্কে যে হাদীস বর্ণিত তার সনদ দুর্বল। কিন্তু পূর্বসুরী শামের আলিমগণ এর উপর আমল করেছেন। এ কারণে আমাদের অধিকাংশ লোকদের নিকট ও অন্যান্যদের নিকট তা মুস্তাহাব। (ইকতিদাউস সিরাতাল মুস্তাকীম)
ইবনে তাইমিয়ার উক্ত মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, হাদীসের সনদে দুর্বলতা থাকলেও অর্থাৎ হাদীস যঈফ হওয়া সত্ত্বেও তার উপর আমল করা জায়িয ও মুস্তাহাব।
হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযীওالروح কিতাবে তালকীনকে মুস্তাহাব বলেছেন।
উল্লেখ্য, আল্লাহর রাসূলের হাদীস নয় এমন কোন উক্তিকে তাঁর উক্তি বলা প্রসঙ্গে যেমন ভয়ংকর পরিণতির কথা হাদীসে উল্লেখ রয়েছে তেমনি কোন হাদীসকে হাদীস না বলাও হাদীস অস্বীকার করার পর্যায়ে পড়ে যায়। বর্তমান সময়ে দেখা যায়, কেউ কেউ কোন কোন হাদীস উল্লেখের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তা পরিত্যাগ করার সুযোগ অন্বেষন করেন। যেমন কোন হাদীস সম্পর্কে হাদীস বিশেষজ্ঞদের لا يصح (সহীহ নয়), لا يثبت (ছাবিত নেই) ইত্যাদি মন্তব্যকে তারা হাদীস প্রত্যাখ্যানের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের এ কৌশল তাদের মুর্খতার পরিচয় প্রদান করে। কারণ উসুলে হাদীসের পরিভাষায় এসব উক্তি হাদীস অগ্রহণযোগ্য হওয়ার দলীল নয়। আল্লামা আব্দুল হাই লখনবী (র.) তাঁর লিখিত কিতাবে এ প্রসঙ্গে বিশ্ববরেণ্য হাদীস বিশেষজ্ঞদের উক্তি উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেনÑ কোন কোন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কোন হাদীস সম্পর্কেلا يصح (অসহীহ নয়) অথবা لايثبت (সাবিত নেই) মন্তব্য করেন। তা দেখে অনেক অজ্ঞ লোক এটাকে موضوع (মউযু) বা ضعيف (দুর্বল) বলে ধারণা করেন। এটি তাদের হাদীসের পরিভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতার উপর ভিত্তিশীল। মোল্লা আলী কারী (র.)تذكرة الموضوعات কিতাবে লেখেন عدم ثبوت (সাবিত নেই) কথা দ্বারা হাদীস موضوع (মউযু) হওয়াকে আবশ্যক করে না।
হাফিয ইবনে হাজার (র.) الاذكار গ্রন্থের হাদীসের তাখরীজ সম্পর্কিত তদীয় نتائج الافكار কিতাবে লেখেন- ওযুতে বিসমিল্লাহ পড়া প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, আমি ওযূতে বিসমিল্লাহ পড়া সম্পর্কিত কোন হাদীস জানি না। আমি বলি, কারো না জানা বাস্তবে তা না থাকা সাবিত করে না। যদি তা মেনে নেওয়াও হয় তবুও সাবিত না থাকা যঈফ হওয়াকে সাবিত করে না। কারণ হতে পারেثابت (প্রমাণিত) দ্বারাصحيح (সহীহ) বুঝানো হয়েছে, তাহলে তা حسن (হাসান) হতে পারে। যদি তাও মেনে নেয়া যায়; তাহলেও প্রত্যেক فرد এর নফী দ্বারা পুরো বিষয়টি نفي (না বাচক) হয়ে যায় না।
নূর উদ্দীন সামহুদী الشرفين فضل فى العقدين جواهر এর মধ্যে বলেন: আশুরার দিনে পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি বেশি খরচ করার হাদীস সম্পর্কে ইমাম আহমদ (র.)-এর উক্তি لا يصح (সহীহ নয়) দ্বারা তা বাতিল হয়ে যায় না। বরং এটি غير صحيح (সহীহ নয় এমন) হতে পারে যা দলীল হিসেবে গ্রহণের যোগ্য, যখন এটি ‘হাসান’ হবে। এর স্তর সহীহ ও যঈফ হাদীসের মধ্যখানে।
যরকশী نكت ابن الصلاح গ্রন্থে বলেন, আমাদের কথা موضوع (মউযু) ও لا يصح (সহীহ নয়) এর মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। কারণ প্রথমটি মিথ্যা হওয়া সাবিত করে অপরদিকে দ্বিতীয়টি সাবিত না থাকার সংবাদ দেয়। আর সাবিত না থাকা বাস্তবে না থাকা বুঝায় না। একথা এমন সকল হাদীসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যেগুলো সম্পর্কে ইবনুল জাওযী لا يصح (সহীহ নয়) বলেছেন।
মোল্লা আলী কারী বলেছেন সাখাবীর উক্তি لا يصح (সহীহ নয়) যঈফ ও হাসানকে নফী করে না।
যুরকানী বলেন- আল্লামা কাসতালানী (র.) ইবনে রজব থেকে বর্ণনা করেন যে, ইবনে হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। এতে ইবনে দেহইয়ার সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যাতে তিনি বলেছিলেন- ‘শাবানের মধ্যরাতের ফযীলত সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীস নেই।’ যদিও তিনি সহীহ দ্বারা পারিভাষিক সহীহ বুঝিয়েছেন। কারণ মু‘আয (রা.)-এর হাদীস সহীহ নয় বরং হাসান। (আর রাফউ ওয়াত তাকমীল ফিল জারহি ওয়াত তা‘দীল, পৃষ্ঠা ১৯১-১৯৭)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন