সোমবার, ৪ মে, ২০১৫

রজব মাস হলো রামাদ্বান মাসের প্রস্তুতির মাস


মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী
الحمد لله المتقدس بنعوت الكمال، المتعالي علي عباده بصفات الجلال، الي عباده بصفات الجمال، نحمده حمد الشاكرين لفضله، المقرين بألوهيته ووحدانيته، ونصلي ونسلم علي سيدنا محمد، السابق إلي الأنام نورُه، والرحمة للعالمين ظهورُه، صلوةً تستغرق العد، وتحيط بالحد، لا أمد لها، ولا انقضاء لها، ولا انفصام لها، ولا انقطاع لها، وعلي اله الأطهار وصحبه الأبرار. أما بعد-
আলহামদুলিল্লাহ! আমরা রজব মাসের প্রথম জুমু‘আয় উপস্থিত হতে পেরেছি। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। রজব মাস মুসলমানদের কাছে বিশেষ একটি কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি এই মাসে মহান আল্লাহ তা‘আলা তার প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরশে আযীমে নিয়ে মি’রাজ করিয়েছেন। ইসরাকে (মক্কা শরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত) অস্বীকার করা কুফরী। মহান আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে ফরমান-
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ.
-পবিত্রতা ও মহিমা সেই মহান সত্ত্বার যিনি তার বান্দাহকে রাতে ভ্রমন করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত-- যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি-- তাঁকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শুনেন এবং সব কিছু দেখেন।
রজব মাস রাসূল (সা.)-এর মি‘রাজের মাস। এই মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়। হাদীস শরীফে এসেছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) বলেন-
وَإِنَّمَا سُمِّيَ رَجَبٌ ، لأَنَّ الْمَلائِكَة تَرْجُبُ فِيهِ بِالتَّسْبِيحِ وَالتَّحْمِيدِ وَالتَّمْجِيدِ لِلْجَبَّارِ عَزَّ وَجَلَّ.
-রজব মাসকে রজব বলার কারণ হলো এই মাসে ফিরিশতারা বেশি বেশি মহান আল্লাহর তাসবীহ, তাহলীল এবং তাহমীদ করেন। আমাদেরকেও এর সাথে বেশি বেশি তাসবীহ পড়া উচিৎ। বুখারী শরীফের শেষ হাদীস, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
كَلِمَتَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ.
-দু’টি শব্দ মহান আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয়, যা উচ্চারণে অতি হালকা কিন্তু মিযানের পাল্লায় খুবই ভারি, শব্দ দু’টি হলো- سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ
রজব মাস সম্পর্কে আবুল ওয়াররাক বলখী (র.) বলেন-
شهر رجب شهر الزرع وشعبان شهر السَّقِي للزرع، وشهر رمضان شهر حصاد الزرع.
-রজব হলো চারা রূপনের মাস, শা‘বান হলো পানি সিঞ্চনের মাস আর রামাদান হলো ফল আহরণের মাস।
সুতরাং রজব মাস থেকে আমাদেরকে রামাদানের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
হাদীস শরীফে আরো এসেছে-
كان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا دخل رجب قال : اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان
-রজব মাস আসলে রাসূল (সা.) দু‘আ করতেন-হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে রজব এবং শা‘বান মাসের বরকত দান করো আর রামাদান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।
হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
إِنَّ فِي الْجَنَّةِ نَهْرًا ، يُقَالُ لَهُ : رَجَبٌ ، مَنْ صَامَ مِنْ رَجَبٍ يَوْمًا وَاحِدًا ، سَقَاهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ النَّهْرِ.
-জান্নাতে একটি ঝর্ণা আছে যার নাম রজব। যে ব্যক্তি রজবে একটি রোযা রাখবে মহান আল্লাহ তাকে এই ঝর্ণার পানি পান করাবেন।
মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে রজবের আমল করার তাওফীক দান করেন। আমীন।
.................
ভারত উপমহাদেশ এবং আমাদের দেশের মুসলমানদের কাছে রজব মাস আরো দু‘টি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো এই মাসের ৬ তারিখ অর্থাৎ ৬ রজব সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা গরীবে নেওয়ায শাহ মুঈনুদ্দীন চিশতী সনজরী আজমিরী (র.)-এর ওফাত দিবস। আর ২০ রজব হযরত খাজা শরফুদ্দীন চিশতী (র.)-এর ওফাত দিবস।
ভারত উপমহাদেশে ইসলাম আগমন সম্পর্কে সকল ঐতিহাসিক একমত যে এ উপমহাদেশে আউলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার হয়েছে। সুফিয়ায়ে কেরাম ইসলামের পতাকা উড়িয়েছেন। সে জন্যে উপমহাদেশে ও আমাদের দেশের মুসলমানগণ তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (র.) সহ অন্যান্য আউলিয়ায়ে কেরাম এ দেশে তরবারীর জোরে ইসলাম প্রচার করেন নি। তাঁরা তাদের আদর্শ, মহত্ত্ব দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন।
খাজা আজমীরী (র.) যখন ভারতে আসেন তখন আজমীরের শাসক ছিল পৃথ্বিরাজ। সে ছিল খুবই অত্যাচারী শাসক ছিল। রাজা পৃথ্বিরাজ কোন এক মুসলমানকে ( সম্ভবত তাঁরই দরবারের সাথে সম্পর্কিত কেউ হবেন)- কষ্ট ও বিপদের মধ্যে ফেলেন। এর প্রতিকার চেয়ে হযরত খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতী (র) পৃথ্বিরাজকে একটি পত্র লিখেন। পৃথ্বিরাজ অত্যন্ত গর্বভরে অবমাননাকর ভাষায় ঐ পত্রের জবাবে বলেন- ‘এই লোকটি এখানে আসার পর এমন বড় বড় কথা বলে যা কেউ কখনও বলেনি এবং শুনেও নি।’ হযরত খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতী (র) ঐ জবাব শুনে বললেন, ‘ আমি পৃথ্বিরাজকে জীবিত বন্দী করে মুহাম্মাদ ঘুরীর হাতে তুলে দিলাম’। সেই রাতে মুহাম্মদ ঘুরী স্বপ্নে দেখেন কোন এক বুযুর্গ তাকে বলছেন- কাল যদি তুমি ভারত আক্রমন করো তাহলে তুমি ভারত জয় করতে পারবে। মুহাম্মদ ঘুরী ইতিপূর্বে ভারত আক্রমন করে ব্যর্থ হয়েছেন। এ স্বপ্ন দেখার পর সভাসদদের সাথে আলোচনা করে ভারত আক্রমন করেন। মুহাম্মদ ঘুরী ভারত জয় করেন এবং পৃথ্বিরাজকে বন্দী করেন। মহান আল্লাহ তার ওলীর কথাকে সত্যে পরিণত করলেন। ঘটনাটি আবুল হাসান আলী আন-নদভী তার “দা‘ওয়াত ও আযীমত” কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (র.) “আখবারুল আখয়ার” কিতাবে লিখেন- হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (র.)-এর ইন্তিকালের পর তার কপালের উপর লেখা ফুটে উঠে- حبيب الله مات في حب الله “আল্লাহর বন্ধু, আল্লাহর ভালোবাসায় ইন্তিকাল করেছেন”। জানা যায় তার কপালে এই লেখা দেখে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করে।
খাজা ছাহেব (র.)-এর সময়ে ভারতে যাদুবিদ্যার প্রচলন খুব বেশি ছিল। যে যুগে যে সব বিষয়ের বেশি প্রচলন ছিল আল্লাহ তাআলা সে যুগের নবীকে উক্ত বিষয়ের মু‘জিযা দান করেছেন। হযরত মুসা (আ.)-এর সময়ে যাদুর চর্চা ছিল। এই সকল যাদুকরের যাদুকে অক্ষম করতে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) কে লাঠি ও শুভ্র হাত দিয়েছেন। ঈসা (আ.)-এর যুগে চিকিৎসা বিষয়ে মানুষ পারদর্শী ছিল। তাই তাঁকে আল্লাহ তা’আলা জন্মান্ধ ও ধবল রোগীকে সুস্থ করার মু’জিযা প্রদান করেন। আমাদের নবী (সা.)-এর সময়ে কবিতা চর্চার প্রচলন ছিল ব্যপক। তৎকালীন প্রসিদ্ধ কবিগণ বিভিন্ন মেলায় কবিতার আসর করত, চর্চা করত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন নাযিল করে এই সব কবিদের কাব্যপ্রতিভাকে অক্ষম করে দিলেন। মহান আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করলেন এর ছোট একটি আয়াতের সমান আয়াত রচনা করতে। কিন্তু তারা তা পারে নি।
আল্লাহ তাআলা নবীদেরকে অলৌকিক যে ক্ষমতা দান করেন তাকে মু‘জিযা বলে আর ওলীগণকে যে ক্ষমতা দান করেন তাকে কারামত বলে। কারামত সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদা কি, সে সম্পর্কে আকাইদে নাসাফীতে বলা হয়েছে- كرامة الأولياء حق-আউলিয়ায়ে কেরামের কারামত সত্য।
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (র.) সব সময় ওযূর সহিত থাকতেন, সারাজীবন দিনে রোযা রাখতেন রাতের বেলা ইবাদত করতেন। দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দু’বার কুরআন শরীফ খতম করতেন।
আগে একবার বলেছি যে ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করেছেন আউলিয়ায়ে কিরাম। তাঁরা তাদের আদর্শ দিয়ে মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে এসেছেন। হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রা.) (র.) ছিলেন সিজিস্তানের মানুষ। তিনি স্থানীয় ভাষা বুঝতে পারতেন না। হযরত শাহজালাল মুর্জারাদে ইয়ামনী (র.) ছিলেন ইয়ামনের অধিবাসী, আরবী ভাষাভাষী। তিনি বাংলা বুঝতেন না। এখানে যারা বাসিন্দা ছিলেন তারাও আরবী বুঝতেন না। তাহলে তারা কিভাবে ইসলাম প্রচার করলেন? তাদের কথা মানুষ কিভাবে বুঝতো অথবা তারা কিভাবে মানুষের কথা বুঝতেন? মানুষ তাদের চেহারা দেখে, তাদের আদর্শ দেখে মুসলমান হয়েছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন إذا رؤوا ذكر الله -ওলী হচ্ছেন তিনি যাকে দেখলে মহান আল্লাহকে স্মরণ হয়।
আমরা এই সব মহান বুযুর্গদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের উচিত তাদের জন্য দু‘আ করা। তাদের জন্যে দু‘আ করলে আমরাই উপকৃত হবো। আমরা তাদের রূহানী ফায়য লাভ করতে পারব। দু’রাকাআত নামায পড়ে অথবা কুরআন তিলাওয়াত করে, সাদকাহ করে অথবা অন্য নেক আমল করে তাদের রূহের উদ্দেশ্যে ঈসালে সাওয়াব করতে পারি। রূহ মারা যায় না। মুসলমান হোক অথবা বিধর্মী হোক, কারো রূহ মারা যায় না। কুরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছি।
হযরত আজমীরী (র.) সম্পর্কে আমাদের পীর ও মুরশিদ হযরত আল্লামা আব্দুল লতীফ ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর একটি ঘটনা মনে পড়ল। হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলা (র.) বলেন আমি ছাত্র জীবনে আযমিরী (র.)-এর মাযারে খুব বেশি আসা-যাওয়া করতাম। একদিন আযমিরী (র.) আমাকে বলছেন- এখানে বেশি আসার প্রয়োজন নেই। বদরপুরেই থাকো। ওখান থেকেই তুমি সবকিছু হাসিল করতে পারবে। ছাহেব কিবলাহ (র.) স্বপ্নে না মুরাকাবায় সাক্ষাৎ করেছেন তা আমাদের বলেন নি। সুবহানাল্লাহ। এটাই হচ্ছে ওলীদের ক্ষমতা। ইন্তেকালের পরেও তারা সঠিক পথ দেখাতে পারেন।
আউলিয়ায়ে কেরামের দরগাহ গরীব-অসহায়দের আবাসস্থল। আমাদের সামনে যিনি শুয়ে আাছেন খাজা শরফুদ্দীন (র.), তার দরগাহতে প্রতিদিন কয়েকশ’ গরীব-অসহায়কে খাদ্য বিতরণ করা হয়। আমাদের কারো বাড়িতে কি সম্ভব প্রতিদিন দুইশত মানুষকে খাবার প্রদান করা? সম্ভব নয়। ওলীগণের ইীন্তকালের পরেও মানুষ তাদের কাছ থেকে উপকৃত হয়।
আমরা আউলিয়ায়ে কেরামের মাযারে যাই। সুন্নত নিয়মানুযায়ী মাযার যিয়ারত করি। তাদের ওসীলা নিয়ে আল্লাহর দরবারে দু‘আ করি। উমাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম গরীব মুহাজিরদের ওসীলায় বিজয়ের দু‘আ করতেন। (শরহুস সুন্নাহ)
আমরা ওলীর কাছে চাই না বরং তার ওসীলা নিয়ে আল্লাহর দরবারে দুআ করি। এখন কিছু ভ-ের কারণে তো আমরা হক্কানী ওলীদের থেকে দূরে থাকতে পারি না। আসলের সাথে নকল সব সময় ছিল, থাকবে। তাফসীরের ক্ষেত্রেও ভেজাল করা হয়েছে। শি‘আ, মু‘তাযিলা, খারেজীরা তাদের ইচ্ছামতো কুরআন শরীফের তাফসীর করেছে, তাফসীর বির রায় করা হয়েছে। তাই বলে কি আমরা সঠিক তাফসীরগুলো ছেড়ে দিব? রাসূল (সা.)-এর ওফাতের কিছুকাল পরেই হাদীসের ক্ষেত্রে জাল হাদীস রচনা শুরু হয়। স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজ স্বার্থে হাদীস বানাতো। এক মুসলিম বাদশাহকে এক বেগুন বিক্রেতা তার বেগুনের গুনাবলী বর্ণনা করার জন্যে বানিয়ে বললো রাসূল (সা.) ইরশাদ বরেছেন- বেগুন সকল রোগের ঔষধ। রাসূল (সা.)-এর হাদীস শুনে খলীফা বেগুন নিলেন। খাওয়ার পর তার চুলকানী রোগ হয়ে গেল। বাদশাহ বিক্রেতাকে ধরিয়ে এনে বললেন তুমি বললে সকল রোগের ঔষধ কিন্তু আমার তো চুলকানী হয়ে গেছে। তখন সে বলল ওহ! আমি ভূলে গিয়েছিলাম। হাদীসে ছিল চুলকানী রোগ ছাড়া সকল রোগের ঔষধ।
এভাবে নিজ স্বার্থে কিছু লোক হাদীস বানিয়ে রাসূল (সা.)-এর নামে চালিয়ে দিত। জাল হাদীসের ছড়াছড়ি শুরু হলো। তাই বলে কি আমরা মূল হাদীস ছেড়ে দিব? যে কোন ভালো ভালো পন্য বাজারে আসলে তার নকলও বের হয়। সে জন্যে তো আমরা আসলকে ছেড়ে দেই না। তদ্রুপ তাসাউফের নামে ভ-ামী করলে আমরা ভ-ামী থেকে দূরে থাকবো কিন্তু হাক্কানী ওলী আউলিয়াকে ত্যাগ করতে পারি না। তাদের আদর্শ অনুসরণ করব। কারণ যাকে মুহাব্বাত করা হয় তার সব কিছু অনুসরণ করতে হয়। এক কবি বলেন- إن المحب لمن يحب مطيع
আউলিয়ায়ে কিরামের আদর্শ ছিল মানুষকে তাওহীদ-রিসালতের পথে আহ্বান করা, অসহায় দুঃস্থ মানুষের সেবা করা, দ্বীনের খেদমত করা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- صِبْغَةَ اللَّهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً
আউলিয়ায়ে কেরাম আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গিন ছিলেন।
মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে আউলিয়ায়ে কিরামের অনুসরণের তাওফীক দান করেন। আমীন।
..................
এখন নামায সম্পর্কে দু’টি কথা বলতে চাই। আমরা যখন একাকী নামায পড়ি তখন সূরা আসর এবং কাউসার পড়ে দায় সারি। কিন্তু ইমামতির সময় লম্বা সূরা পাঠ করে মানুষের বিরক্তি বাধিঁয়ে দেই।
জামা‘আতের সহিত নামায আদায় করলে আমাদের নামায কেমন হওয়া উচিৎ প্রিয়নবী (সা.) থেকে এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা পাই।। একবার হযরত মু‘য়ায বিন জাবাল (রা.) নামাযের ইমামতি করছেন। তিনি নামাযে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত শুরু করলেন। একজন নামায ছেড়ে দিয়ে একাকী সংক্ষিপ্তভাবে নামায পড়লেন। তখন তাকে মু‘আয (রা.) মুনাফিক বলে ধারনা করলেন। লোকটির কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা হাত দিয়ে খেটে খাওয়া এবং উট দিয়ে পানি সিঞ্চনকারী লোক। মু‘আয নামাযে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত শুরু করছেন। তাই আমি একা নামায সংক্ষেপে আদায় করে চলে গেছি। ফলে তিনি আমাকে মুনাফিক ধারণা করেছেন। রাসূল (সা.) তিনবার বললেন হে মু‘আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি করছ? (জামা‘আতে নামায আদায় করলে) সূরা শামস এবং আ‘লা দিয়ে পড়বে। আরেক বর্ণনায় আছে, সূরা শামস এবং আ‘লা দিয়ে পড়বে কেননা তোমাদের পিছনে বৃদ্ধ, দূর্বল এবং হাজতওয়ালা লোক নামায আদায় করে।
তাই আমরা যখন জামা‘আতে নামায পড়ব সংক্ষিপ্ত নামায পড়ব। একাকী হলে যত ইচ্ছা লম্বা নামায পড়ব। হাদীসে এসেছে-
وعن أبي هريرة - رضي الله عنه : أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قال: إذا صلى أحدكم للناس فليخفف؛ فإنه منهم الضعيف، والسقيم، والكبير، وإذا صلى أحدكم لنفسه فليطول ما شاء.
-হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমরা যখন মানুষকে নিয়ে (জামা‘আতে) নামায আদায় করো তখন সংক্ষিপ্তভাবে পড়। কেননা তাদের মধ্যে দূর্বল, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ লোক থাকে। আর যখন একাকী নামায পড় তখন যতক্ষন ইচ্ছা লম্বা করো।
(সুপ্রিম কোর্ট মাজার মসজিদে জুমআপূর্ব বয়ান, ৪-০৫-২০১৫
অনুলিখন : মাহমুদুল হাসান)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন