মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০১৫

শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফযীলত

মোহাম্মদ নজমুল হুদা খান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। তিনি কোনো না কোনো উপলক্ষ ধরে আপন বান্দাকে ক্ষমা করতে চান। বিশেষত উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতি তিনি অত্যন্ত অনুগ্রহপরায়ন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত যাতে অল্প সময়ে অধিক কুরবত ও সফলতা অর্জন করতে পারে সে লক্ষ্যে তাদের জন্য তিনি বরকতময় বিভিন্ন দিন ও সময় নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল কদর, যে রাতকে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতও বিশেষ ফযীলতপূর্ণ রাতের মধ্যে একটি। আমাদের দেশে এ রাত ‘শবে বরাত’ নামে পরিচিত। এর আরবী পরিভাষা ‘লাইলাতুল বারাআত’ অর্থাৎ মুক্তির রজনী। হাদীস শরীফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ অর্থাৎ শা’বানের মধ্যবর্তী রাত বলা হয়েছে। সহীহ হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন অতঃপর মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। মুমিনদের জন্য কল্যাণের বার্তাবাহী যে সকল দিবস-রজনী রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটির বর্ণনা সরাসরি কুরআন মজীদে এসেছে। আবার কোনো কোনোটির বর্ণনা সরাসরি কুরআন মজীদে নেই, তবে তা হাদীসে নববীতে রয়েছে। শবে বরাতের বর্ণনা সরাসরি কুরআন মজীদে পাওয়া যায় না। তবে পবিত্র আল কুরআনুল কারীমের সূরা দুখানের তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াতে বর্ণিত রাতকে কোনো কোনো মুফাসসির শবে বরাত বলে উল্লেখ করেছেন। সূরা দুখানের আয়াত দুটি হচ্ছে- মহান আল্লাহ রাব্বুল ্আলামীন ইরশাদ করেন : “আমি এটি (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমি তো সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।” (সূরা দুখান, আয়াত ৩-৪) এখানে উল্লেখিত ‘বরকতময় রজনী’র ব্যাখ্যায় হযরত ইকরামা ও একদল মুফাসসির বলেছেন, এ রাত হলো শবে বরাত। তাফসীরে রূহুল মা‘আনীসহ বিভিন্ন তাফসীরে উল্লেখ আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.), কাতাদাহ, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র, মুজাহিদ, ইবনে যায়দ, হাসান বসরীসহ জমহুর মুফাসসিরীনের মতে, বরকতময় রজনী বলতে শবে কদর উদ্দেশ্য। ইমাম কুরতুবী, আল্লামা ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী, ইমাম রাযী, আল্লামা মাহমুদ আলুসী বাগদাদী, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীসহ প্রখ্যাত মুফাসসিরগণ স্ব-স্ব তাফসীর গ্রন্থে “বরকতময় রাত্রির” ব্যাখ্যায় পূর্বসূরী মুফাসসিরদের থেকে বর্ণিত দুটি মতই (শবে কদর ও শবে বরাত) উল্লেখ করেছেন। জমহুর মুফাসসিরীনের বর্ণনা অনুযায়ী ‘বরকতময় রজনী’ বলতে শবে বরাত উদ্দেশ্য না হলেও তাঁদের বিভিন্ন বর্ণনায় শবে বরাতের বিশেষত্বের দিক পরিলক্ষিত হয়। যেমন তাফসীরে রূহুল মাআনীতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, সকল বিষয় সিদ্ধান্ত হয় শা’বান মাসের মধ্যরাতে অর্থাৎ শবে বরাতে এবং এগুলো সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় রামাদান মাসের ২৭ তম রাতে অর্থাৎ শবে কদরে (তাফসীরে রূহুল মাআনী, খ- ২৫, পৃষ্ঠা ১১৩)। বিভিন্ন তাফসীরে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’-এর ব্যাখ্যায় শবে কদরের পাশাপাশি মুফাসসিরীনে কিরাম শবে বরাত প্রসঙ্গে যে আলোচনা করেছেন এবং এর সপক্ষে যে সকল হাদীস এনেছেন তা থেকেই শবে বরাতে সবিশেষ ফযীলত প্রমাণিত হয়। শবে বরাত সম্পর্কে হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সহীহ ইবনে হিব্বান-এর মধ্যে রয়েছে- হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তাআলা শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক অথবা হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান (অখ-) পৃষ্ঠা ১৫১৪, হাদীস নং ৫৬৬৫) সহীহ ইবনে হিব্বান ছাড়াও ইমাম বায়হাকী’র শুয়াবুল ঈমান, ফাদ্বাইলুল আওকাত, ইমাম তাবারানী’র আল মুজামুল কাবীর, আল মুজামুল আওসাত, হাফিয আল মুনযিরী, আত তারগীব ওয়াত তারহীবসহ বিভিন্ন হাদীসগন্থে এ হাদীসটি রয়েছে। শায়খ নাসিরউদ্দিন আলবানী যিনি পূর্বসূরী মুহাদ্দিসীনে কিরামের নীতি-আদর্শকে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব বিবেচনায় বহু সহীহ হাদীসকে যঈফ এমনকি মাওযূ পর্যন্ত বলেছেন, বুখারী ও মুসলিম ছাড়া সিহাহ সিত্তাহ’র অন্য কিতাবসমূহকে সহীহ ও যঈফ এ দুভাগে বিভক্ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন তিনিও তার‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহা’ গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এ হাদীস সম্পর্কে তার মন্তব্য হলো- এ হাদীসটি সহীহ। একদল সাহাবী থেকে বিভিন্ন সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে, যা একে অন্যকে শক্তিশালী করে। এ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবায়ে কিরাম হলেন- ১. হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) ২. আবূ সা’লাবা আল খুশানী (রা.) ৩. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) ৪. আবূ মূসা আল আশআরী (রা.) ৫. আবূ হুরায়রাহ (রা.) ৬. আবূ বকর (রা.) ৭. আউফ ইবনে মালিক (রা.) ৮. হযরত আয়িশাহ (রা.)। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহা, খ- ৩, পৃষ্ঠা ১৩৫, হাদীস নং ১১৪৪) হযরত আবূ সা’লাবা আল খুশানী (রা.) বর্ণিত হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, খ- ৩, পৃষ্ঠা ৩৮১) নাসির উদ্দিন আলবানী তদীয় সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব এর মধ্যে হাদীসটিকে ‘সহীহ লিগাইরিহি’ বলেছেন (খ- ৩, পৃষ্ঠা ৩৪, হাদীস নং ২৭৭১) এবং সহীহ জামিউস সগীর ওয়া যিয়াদাতুহু-এর মধ্যে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (খ- ১, পৃষ্ঠা ১৩৭)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে (শবে বরাত) আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তবে দুপ্রকার ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। ১. হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী ২. মানুষ হত্যাকারী (মুসনাদে আহমদ, খ- ১১, পৃষ্ঠা ২১৬)। হাফিয আল মুনযিরী বলেছেন, ইমাম আহমদ (র.) হাদীসটি দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। এর জবাবে নাসির উদ্দিন আলবানী বলেছেন : এ হাদীসের সমর্থনে রশীদ ইবনে সা’দ ইবনে হুয়াই এর হাদীস রয়েছে। সুতরাং হাদীসটি হাসান। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ, খ- ৩ পৃষ্ঠা ১৩৫) শুআইব আল আরনাউত মুসনাদে আহমদ-এর তা’লীকে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। হযরত আবূ মুসা আল আশ‘আরী (রা.) বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক অথবা হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ, খ- ১, পৃষ্ঠা ৪৪৫) নাসির উদ্দীন আলবানী তদীয় ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ’-এর মধ্যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। তিনি তদীয় সহীহ ইবনে মাজার মধ্যে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন এবং সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীবের মধ্যে হাদীসটি সম্পর্কে বলেছেন : হাদীসটি সহীহ লিগাইরিহি। ইমাম ইবনে মাজা স্বীয় শব্দে আবূ মুসা আশআরী (রা.) থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। (সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খ- ৩, পৃষ্ঠা ৩৩, হাদীস নং ২৭৬৮) হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক অথবা হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। (বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান, খ- ৩, পৃষ্ঠা ৩৮০) এ হাদীসটির সনদ সম্পর্কে হাফিয যকী উদ্দীন আল মুনযিরী বলেন, হাদীসটি বায্্যার ও বায়হাকী এমন সনদে বর্ণনা করেছেন যার মধ্যে কোনো অসুবিধা নেই। শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী তদীয় সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন, হাদীসটি সহীহ লি গাইরিহি। বায্্যার ও বায়হাকী আবূ বকর সিদ্দীক (রা.)-এর সূত্রে এমন সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যাতে কোন অসুবিধা নেই। (সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খ- ৩, পৃষ্ঠা ৩৪, হাদীস নং ২৭৬৯) হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় পেলাম না তাই আমি তাঁকে খুঁজতে বের হলাম। বাকী নামক কবরস্থানে তাঁকে পেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি আশংকা করছ যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি মনে করেছি আপনি আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন অতঃপর কালব গোত্রের পালিত বকরীর পশমের পরিমাণের চেয়েও অধিক পরিমাণ লোকদের ক্ষমা করেন (তিরমিযী, খ- ৩, পৃষ্ঠা ১১৬; মুসনাদে আহমদ, খ- ৪৩, পৃষ্ঠা ১৪৬)। এ হাদীসটি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ইবনে মাজা, আবূ বকর ইবনে আবি শায়বা, ইমাম বায়হাকী, ইমাম বাগাভী (র.) এর মতো প্রখ্যাত মুহাদ্দিসীনে কিরাম স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন কিন্তু কেউই একে যঈফ বা দুর্বল বলে অভিহিত করেননি। আর ইমাম ইবনে হিব্বান (র.) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এছাড়া হাদীসটি উরওয়া ইবনে যুবায়র-এর সনদ ছাড়াও আরো চারটি সনদে বর্ণিত হয়েছে। আর একাধিক সূত্রে বর্ণিত হবার কারণে এটি সহীহ লি গাইরিহী অথবা হাসান এর পর্যায়ভুক্ত। উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, শবে বরাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে কমপক্ষে ত্রিশজন সাহাবীর বর্ণনা রয়েছে। হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শা’বানের মধ্যবর্তী রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর দিনে সিয়াম পালন করবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন : আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছো কি কোনো রিয্ক প্রার্থনাকারী? আমি রিয্ক দান করব। আছো কি কোনো বিপদে নিপতিত ব্যক্তি? আমি সুস্থতা দান করব। আছো কি এমন? আছো কি এমন? এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ, খ- ১, পৃষ্ঠা ৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) উসমান ইবনে মুগীরা ইবনে আখনাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক শা’বান থেকে পরবর্তী শা’বান পর্যন্ত জীবনকাল নির্ধারিত হয়। এমনকি একজন মানুষ বিয়ে করে, তাঁর সন্তান হয় অথচ তার নাম মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় বের করে রাখা হয়ে গেছে। (শুআবুল ঈমান, খ- ৩, পৃষ্ঠা ৩৮৬) হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (রা.) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন শা’বানের মধ্যবর্তী রাত (শবে বরাত) আসে তখন আল্লাহ পাক এই বলে আহবান করেন, তোমাদের মধ্যে কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো প্রার্থনাকারী কি আছে? আমি তার চাহিদা পূর্ণ করে দেব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যেই চাইবে তাকে দান করা হবে, কেবল ব্যভিচারিনী ও মুশরিক ব্যতীত। (শুআবুল ঈমান, খ--৩, পৃষ্ঠা-৩৮৩) হযরত আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শবে কদরের পর সর্বোত্তম রাত হলো শা’বানের মধ্যবর্তী রাত (শবে বরাত)। এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর মুশরিক, হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী অথবা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে রজব হাম্বল,ি লাতায়িফুল মা‘আরিফ, পৃষ্ঠা ১৯১) উপরোল্লিখিত হাদীসসমূহের ভাষ্যানুযায়ী শা’বানের মধ্যবর্তী রাত তথা শবে বরাতে আল্লাহ তা’আলা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ছাড়া তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। একজন মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কি হতে পারে? আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত এ ক্ষমা তথা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় এবং তাঁর আরো অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় তাবিঈন, তাবে তাবিঈন ও আইয়্যাম্মায়ে মুজতাহিদ এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগি করেছেন। পাশাপাশি মানুষদের এ রাতে ইবাদত বন্দেগি করতে উৎসাহিত করেছেন। তাদের অনুসরণে আমাদের উচিত হলো নেক আমলের মাধ্যমে এ রাত অতিবাহিত করা। এ রাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের আমল করতে পারি। যেমন- রাত জেগে কুরআন তিলাওয়াত ও তাসবীহ-তাহলীল ও দরুদ শরীফ পাঠ করা, দুআ-ইস্তিগফার করা, মৃত আত্মীয়-স্বজন ও মুসলমানদের কবর যিয়ারত করা ও তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা , নফল নামায আদায় করা, ১৫ শা’বান দিনে রোযা রাখা ইত্যাদি। মনে রাখা উচিত যে, শা’বান মাস ও মহিমান্বিত শবে বরাত মহান আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের এক অনন্য সুযোগ। সুতরাং এ সময়ে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যা আল্লাহর রহমত লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। শবে বরাত নিয়ে সমাজে কিছু বিদআত ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে : ঘর-বাড়ি, দোকান, মসজিদ ও রাস্তা-ঘাটে আলোকসজ্জা করা, বিনা প্রয়োজনে মোমবাতি কিংবা অন্য কোনো প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা, আতশবাজি করা, পটকা ফোটানো, মাজার ও কবরস্থানে মেলা বসানো ইত্যাদি। এ সকল বিদআত ও কুসংস্কার থেকেও আমাদের বেঁচে থাকা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদেরকে নেক আমলের মাধ্যমে শবে বরাত অতিবাহিত করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

http://www.sylheterdakbd.com/TheDailySylheterDak/DetailsPage.aspx?PostId=47238&PageId=3