শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫

শা’বান মাসের ফযীলত


মোহাম্মদ নজমুল হুদা খান

শা’বান এক মহিমান্বিত ও বরকতময় মাস। বছরের অন্যান্য মাসের উপর এ মাসের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব। হাদীস শরীফে আছে যে, প্রত্যেক বছর শা’বান মাসে মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রজব মাসের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য মাসের উপর এমন, যেমন আল কুরআনুল কারীমের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য আসমানী গ্রন্থের উপর। আর শা’বান মাসের ফযীলত অন্যান্য মাসের উপর এমন, যেমন আমার মর্যাদা অন্যান্য নবীগণের উপর। আর রামাদানের ফযীলত অন্যান্য মাসের উপর এমন, যেমন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব সকল সৃষ্টির উপর। (হযরত আবদুল কাদীর জিলানী (র.), গুনিয়াতুত তালিবীন, পৃষ্ঠা ২৪৬)
হযরত জুন্নুন মিসরী (র.) বলেন, রজব হচ্ছে মন্দ কাজ পরিত্যাগের মাস, শা’বান হচ্ছে ইবাদত করার মাস এবং রামাদান হচ্ছে অলৌকিক দৃশ্য দর্শনের মাস। সুতরাং যে ব্যক্তি মন্দ কাজ পরিত্যাগ করে না, আনুগত্যের পথ অবলম্বন করে না এবং অলৌকিকতা দর্শনের অপেক্ষায় থাকে না, সে অনর্থক কর্মসম্পাদনকারীদের পর্যায়ভূক্ত। তিনি আরও বলেন, রজব মাসে শস্য বপন করা হয়, শা’বান মাসে ক্ষেতে পানি সেচ করা হয় এবং রামাদান মাসে ফসল কর্তন করা হয়। সুতরাং কর্তনকারী ঐ বস্তুই কর্তন করে, যা সে বপন করে থাকে। এজন্য মানুষ যা কিছু করে থাকে, তারই প্রতিফল পায়। যে ব্যক্তি নিজের ক্ষেত বিনষ্ট করে, সে ফসল কর্তনের সময় লজ্জিত হয় এবং এর পরিণতিও খারাপ হয়। (গুনিয়াতুত তালিবীন, পৃষ্ঠা ২৩৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাস শা’বান
শা’বান মাসের অত্যধিক ফযীলতের কারণে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসকে তাঁর নিজের মাস বলে অভিহিত করেছেন। হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-রামাদান আল্লাহর মাস এবং শা’বান আমার মাস। শা’বান পবিত্রতা দানকারী আর রামাদান গুনাহমোচনকারী। (কানযুল উম্মাল, খ- ৮, পৃষ্ঠা ৭৪৭, হাদীস নং-২৩৬৮৫, ইবনে আসাকির, দায়লামী, আল জামিউস সগীর লিস সুয়ূতী)
শা’বান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাস হওয়ার কারণ হলো তিনি এ মাসে আবশ্যকতা ছাড়া অর্থাৎ নফল হিসেবে অধিক রোযা রাখতেন। আর রামাদান আল্লাহর মাস হওয়ার কারণ হলো আল্লাহ তা‘আলা এ মাসে রোযা রাখা ফরয করে দিয়েছেন। ফলে এ মাসে রোযা রাখা বান্দার প্রতি আল্লাহর হক হিসেবে পরিগণিত। (ফায়যুল কাদীর লিল মানাভী, খ--১৪, পৃষ্ঠা ৪০৫)

শা’বান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে রোযা রাখতেন
শা’বান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে রোযা রাখতেন। হাদীস শরীফে আছে- হযরত আবূ সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়িশা (রা.) তাঁকে বর্ণনা করেছেন, আয়িশা (রা.) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বানের চেয়ে অধিক রোযা অন্য কোনো মাসে রাখতেন না। তিনি পূরো শা’বানই রোযা রাখতেন। আর তিনি বলতেন, তোমরা সাধ্যমতো আমল কর। কেননা আল্লাহ তাআলা অধিক আমলের সওয়াব দিতে অপারগ হবেন না, তবে তোমরা অধিক আমল করতে অপারগ হয়ে পড়বে। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পছন্দনীয় নামায হলো সেই নামায যা নিয়মিত আদায় করা হয়, যদিও তা কম হয়। যখন তিনি কোনো নামায আদায় করতেন তখন তা নিয়মিত করতেন। (বুখারী) এ বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো শা’বানই রোযা রাখতেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি শা’বানে সামান্য দিন ছাড়া সবদিনই রোযা রাখতেন। (মুসলিম)
হযরত আয়িশা (রা.) বর্ণিত অপর হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে রোযা রাখা আরম্ভ করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর রোযা বাদ দিবেন না। আর যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা রাখবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রামাদান ছাড়া অন্য কোনো মাসে রোযা পূর্ণ করতে দেখিনি এবং শা’বান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক রোযা রাখতে দেখিনি। (বুখারী)
এ সকল হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বান মাসে অধিক রোযা রাখতেন। এর অন্যতম কারণ হলো, মানুষ রজব ও রামাদান মাসকে অধিক গুরুত্ব দেয়। আর মধ্যখানে শা’বান মাসকে ভুলে যায়। ফলে এ মাসে ইবাদত বন্দেগি কম করে। অথচ এ মাসে মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইতেন তাঁর আমল রোযাদার অবস্থায় আল্লাহর নিকট পেশ করা হোক। তাই তিনি এ মাসে অধিক রোযা রাখতেন।
হযরত উসামা ইবনে যায়দ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম- ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনাকে একটি মাসে যেমন রোযা রাখতে দেখি তেমন অন্য কোনো মাসে দেখি না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন মাসে? আমি বললাম, শা’বান। তিনি বললেন, শা’বান হলো রজব ও রামাদান মাসের মধ্যবর্তী মাস। মানুষ এ মাস সম্পর্কে গাফিল থাকে। অথচ এ মাসে বান্দার আমল (আল্লাহর দরবারে) উঠানো হয়। সুতরাং আমি পছন্দ করি যে, আমার আমল রোযাদার অবস্থায়ই উঠানো হোক। আমি বললাম, আপনি তো সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখেন। এ দুটিও কি আপনি ছাড়েন না? তিনি বললেন, বান্দার আমল (এ দুই দিনও আল্লাহর দরবারে) উঠানো হয়। সুতরাং আমি পছন্দ করি যে আমার আমল রোযাদার অবস্থায়ই যেন উঠানো হয়। (বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান, খ- ৩, পৃষ্ঠা ৩৭৭, হাদীস নং ৩৮২০)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদান মাসের পর শা’বান মাসের রোযাকে সর্বোত্তম রোযা বলে অভিহিত করেছেন। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো- রামাদানের পর কোন রোযা উত্তম? তিনি বললেন, রামাদানের সম্মানার্থে শা’বানের রোযা। বলা হলো- কোন সদকা উত্তম? তিনি বললেন, রামাদানের সদকা। ইমাম তিরমিযী (র.) বলেন, এ হাদীসটি গরীব (غريب)। (তিরমিযী)

শা’বান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের আমল
পূর্বোল্লিখিত হাদীসমূহ থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বান মাসে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে রোযা রাখতেন। তিনি এমনভাবে রোযা রাখতেন মনে হতো যেন আর কখনো রোযা বাদ দিবেন না। বুখারী শরীফে আছে, তিনি পুরো শা’বানই রোযা রাখতেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি সামান্য কিছু দিন ছাড়া পুরো শা’বানই রোযা রাখতেন (মুসলিম)।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু‘আ করতেন : “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাদ্বান” অর্থাৎ হে আল্লাহ! রজব ও শা’বান মাসে আমাদের বরকত দান কর এবং আমাদের রামাদান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দাও। (আল আয্্কার লিন নববী, মুজামুল আওসাত লিত তাবারানী)

সাহাবায়ে কিরামও এ মাসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। এ মাসে তাঁরা কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য নেক আমলে সবিশেষ মনোনিবেশ করতেন। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ যখন শা’বান মাসের চাঁদ দেখতেন তখন তাঁরা কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল হতেন। মুসলমানগণ তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করতেন, যাতে দুর্বল ও অভাবগ্রস্ত লোকজন রামাদানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন। আমীরগণ বন্দীদের তলব করতেন। কারো উপর কোনো হদ (শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি) থাকলে তা প্রয়োগ করতেন অন্যথায় মুক্ত করে দিতেন। ব্যবসায়ীগণ এ মাসে তাদের ঋণ পরিশোধ করতেন। অতঃপর ব্যবসা গুটিয়ে নিতেন। রামাদানের চাঁদ দেখার পর তারা গোসল করতেন এং দুুনিয়াবী কাজ থেকে বিরত থাকতেন। (গুনিয়াতুত তালিবীন, পৃষ্ঠা ২৪৬)

রামাদান মাসের প্রস্তুতির মাস শা’বান
শা’বান মাস মূলত: রামাদান মাসের প্রস্তুতির সময়। এ মাস অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এ মাসের আলাদা সম্মান ছিল। এর কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে-

প্রথমত : এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। যার বর্ণনা আগে উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত : রামাদান হলো রহমত, বরকত ও মাগফিরাত অর্জনের মাস। যে সকল বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন কল্যাণ প্রত্যাশা করেন তারা রামাদান মাসের রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও দোযখ থেকে মুক্তির কল্যাণবারিতে নিজেকে সিক্ত করতে চেষ্টা-প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন। তারা রামাদান মাসে দিনে সিয়াম সাধনায় মনোনিবেশ করেন আর রাত্রিবেলা ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করেন এবং এর বিনিময়ে মাগফিরাত প্রত্যাশা করেন। কেননা হাদীস শরীফে আছে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় রামাদানের রোযা রাখে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় শবে কদরে রাত্রি জাগরণ করে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারী)
হাদীস শরীফে আরও আছে- যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় রামাদান মাসে রাত্রি জাগরণ করে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য হাদীসে আছে- যখন রামাদান মাসের প্রথম রাত আসে তখন শয়তান ও জ্বিনদের শৃঙ্খলবদ্ধ করা হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় এমতাবস্থায় আর কোনো দরজা খোলা হয় না এবং বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় তখন আর কোনো দরজা বন্ধ করা হয় না। আর একজন আহবানকারী আহবান করেন : ‘হে কল্যাণপ্রত্যাশী অগ্রসর হও, হে মন্দপ্রত্যাশী সংকুচিত হও। আল্লাহর এমন অনেক বান্দা রয়েছেন যারা দোযখের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ এ অবস্থা (রামাদান মাসের) প্রত্যেক রাতে চলতে থাকে।(তিরমিযী)
রামাদান মাসের এসব কল্যাণ অর্জন তথা যথাযথ হক আদায় করে রোযা রাখা ও রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মহান নিয়ামত অর্জন পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া সম্ভব হবে না। এ প্রস্তুতির মাস হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বান মাসকে অত্যধিক গুরুত্ব দিতেন।
তৃতীয়ত : রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের গাফলতের সময়কে আনুগত্য ও মুজাহাদা (ইবাদত-বন্দেগির প্রচেষ্টা) দ্বারা আবাদ করতে চাইতেন, যাতে তারা পরবর্তী মাসের রহমত ও মাগফিরাত থেকে কোনোভাবে বঞ্চিত না হয়। কেননা শা’বান মাসে গাফিল থাকলে এমনও হতে পারে যে রামাদান মাসটাও গাফলতের মধ্যে চলে যাবে এবং বান্দা পরে আফসোস করবে- হায়! রামাদান মাস তো চলে গেল, আমি তো কোনো কল্যাণ অর্জন করতে পারলাম না। আর রামাদান মাসের কল্যাণ থেকে যে বঞ্চিত হয় তার মতো হতভাগা আর কে হতে পারে? তাই রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদান মাসের নিয়ামত থেকে বিন্দুমাত্র বঞ্চিত হবার সুযোগ যাতে সৃষ্টি না হয় বরং এর পরিপূর্ণ নিয়ামত যাতে অর্জন করা যায় সেজন্য পূর্ব প্রস্তুতির মাস হিসেবে শা’বানকে গুরুত্ব প্রদান করতেন এবং এ মাসে ইবাদত-বন্দেগি ও সিয়াম সাধনায় মনোনিবেশ করতেন।

শা’বান মাসের সবিশেষ গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর অনুসরণে এ মাসে অধিক পরিমাণে রোযা রাখা এবং কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক মনোনিবেশে আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত, যাতে আগত রামাদানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাত অন্বেষণে আমরা পরিপূর্ণরূপে নিবিষ্ট হতে পারি এবং পরম দয়াময়ের সীমাহীন অনুগ্রহ লাভ করে ধন্য হই।
 

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০১৫

বিপদ-আপদে আমাদের তাওবাহ-ইসতিগফার করতে হবে


মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের উপমহাদেশে ঘটে যাওয়া ভুমিকম্পে আমাদের পার্শবর্তী দেশ নেপালে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবাণী আমাদের মাতৃভুমিতে কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
ভুমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বিপদ-আপদের কারণ কি? মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ.
-তোমাদের উপর যে বিপদ পতিত হয় না কেন সেটা তোমাদের কৃতকর্মের ফল। তদুপরি তিনি অনেক বিষয় ক্ষমা করে দেন। (আল-কুরআন, সূরা আশ শূরা, আয়াত নং-৩০)
আমাদের নবীর পূর্বে যে সব নবী-রাসূলগণ আগমন করেছেন তাদের উম্মতদেরকে গোনাহ করার সাথে সাথেই শাস্তি দেওয়া হতো। কিন্তু আমাদের নবী (সা.)-এর জন্য মহান আল্লাহ আমাদের উপর ইহসান করেছেন। তিনি তার রাসূল (সা.) কে বিশেষ্যত্ব দান করেছেন। যার জন্যে আমরা গোনাহ করার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গযব দিয়ে ধ্বংস করেন না। মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবীব (সা.) কে উদ্দেশ্য করে ঘোষনা করেন- وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ
(হে নবী) আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে শাস্তি দিব না যতক্ষন আপনি পৃথিবীতে থাকবেন। মুফাচ্ছিরীনে কেরাম বলেন- আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে কোন নবীর উপস্থিতিতে তাঁর জাতিকে শাস্তিদেন না। শাস্তি দিতে হলে সে নবীকে সরিয়ে নিয়ে শাস্তি নাযিল করেন। যেমন নূহ (আ.)-এর ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি।
উক্ত আয়াতের পরবর্তী অংশ হলো- وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
-আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে শাস্তি দিবেন না যতক্ষণ তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
সুতরাং ভুমিকম্প বা অন্যান্য যে কোন বালা-মসীবতে আমাদেরকে ইসতেগফার করতে হবে। আমাদের গোনাহর জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইতে হবে।
ইসতেগফার ও যিকিরের অভ্যাস গড়ে তুলা উচিত। কেননা সাধারণত আমরা যখন বিপদের মধ্যে পরি তখন আমদের সবচেয়ে চর্চিত বিষয়গুলো মনে পড়ে। আমার এক হুযুর আমাদেরকে বলেছেন তিনি একবার গাড়ি এক্সিডেন্ট করেন। গাড়ি থেকে নামার পরে এক লোক বললেন-আমি অনেক চেষ্টা করেও কালিমাটা স্মরণ করতে পারিনি।ন্তু আশ্চর্য তিনি মনেই করতে পারেন নি। একই গাড়ীতে এক মহিলা ছিলেন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। স্ট্রেচারে করে তাকে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বেহুশ অবস্থায় পড়তে লাগলেন- حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
মানুষ যখন বেশি পাপ করে তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সতর্ক করার জন্যেও বালা-মসীবত দান করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وما نرسل بالآيات إلا تخويفاً আমি ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করে দেন। কিয়ামতের কথা স্মরণ করে দেন।
বিপদের সময় আমাদের করণীয় কি? হাদীস শরীফে এসেছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- যখন তোমরা বিপদাপদে পতিত হও তখন তোমরা ইসতিগফার করো, দূর্বলদেরকে সহায়তা করো।
فإذا رأيتم ذلك فافزعوا إلى ذكر الله ودعائه واستغفاره.
আমাদের সমাজে যারা খারাপ কাজ করে তাদেরকে বাধা দেওয়া উচিত। কেননা খারাপ কাজের বাধা না দিলে যারা সৎকর্মশীল আছেন তারাও বিপদে পতিত হবেন। তিরমিযী শরীফে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
مثل القائم على حدود الله والمدهن فيه كمثل قوم استهموا على سفينة في البحر فأصاب بعضهم أعلاها وأصاب بعضهم أسفلها فكان الذين في أسفلها يصعدون فيستقون الماء فيصبون على الذين في أعلاها فقال الذين في أعلاها لا ندعم تصعدون فتؤذوننا فقال الذين في أسفلها فإننا ننقبها من أسفلها فنستقي فإن أخذوا على أيديهم فمنعوهم نجوا جميعا وإن تركوهم غرقوا جميعا.
-আল্লাহর বিধান পালনকারী এবং অবহেলাকারীদের মধ্যে দৃষ্ঠান্ত হলো একটি জাহাজের আরোহীদের মতো। যারা লটারীর মাধ্যমে দুই তলায় আসন নিয়েছে। একদল উপর তলায় আর একদল নীচ তলায়। নীচ তলার লোকেরা উপর তলায় আরোহন করত পানি সংগ্রহের জন্য। ফলে দ্বিতীয় তলায় পানি পড়ত। তাই উপর তলার লোকেরা বলল তোমরা আমাদের এখানে পানি ফেলে আমাদের কষ্ঠ দিচ্ছ, সুতরাং আমরা তোমাদেরকে উপরে আরোহন করতে দিব না। নীচের তলার লোকেরা বলল, তবে আমরা জাহাজের তলা ফুটা করে পানির ব্যবস্থা করব। এ অবস্থায় উপরের তলার লোকেরা যদি নীচের তলার লোকদের হাত ঝাপটে ধরে ছিদ্র করা থেকে তাদেরকে বিরত রাখে তবে সকলেই বেঁচে যেতে সক্ষম হবে। কিন্তু যদি এদেরকে এ কাজে বাধা না দেয় তাহলে সকলেই ডুবে যাবে।
আমাদের সকলের উচিত খারাপ কাজ দেখলে বাধা দেওয়া। একটি জাতির উপর যখন আল্লাহর গযব আসলো তখন ফিরিশতারা আল্লাহর কাছে বললেন আল্লাহ! তাদের মধ্যে তো নেককার লোকও আছে। আল্লাহ তাআলা বললেন তাদেরকে সহ ধ্বংস করো, কেননা তারা তাদের দায়িত্ব আদায় করে নি। কারণ তাদের দায়িত্ব ছিল তারা খারাপ লোকদের বাধা দিবে।
বনী ইসরাইল জাতি ধ্বংসের কারণ হিসাবে আল্লাহ তাআলা বলেন
كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ.
তারা যে নিকৃষ্ট কাজ করত তা থেকে একে অপরকে বারণ করত না, তারা যা করত তা অবশ্যই খারাপ।
(আল-কুরআন, সূরা আল মায়িদা:৭৯)
ভুমিকম্প থেকে বাঁচার জন্যে আল্লাহর দরবারে তাওবাহ, ইসতিগফারের পাশাপাশি আমাদের জাগতিক সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা উচিত। এটা দূষণীয় নয়। আল্লাহর উপর ভরসা করব সাথে জাগতিক প্রস্তুতিও রাখব। হাদীস শরীফে আছে এক সাহাবী রাসূল (সা.)-এর দরবারে আসলেন। তিনি রাসূল (সা.) কে বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার উট ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করবো না কি বেঁধে আল্লাহর উপর ভরসা করব? রাসূল (সা.) ইরশাদ করলেন أعقلها وتوكلউট বেধে আল্লাহর উপর ভরসা করো। সুতরাং আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করার সাথে সাথে জাগতিক সব ধরনের ব্যবস্থাও রাখব।
...........................
বর্তমান সময়ে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে মানুষ অনেক উচ্চকন্ঠ। কিছুদিন পূর্বেও পাশ্চাত্যে শ্রমিকদের সাথে অমানুষিক আচরণ করা হতো। আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। কিন্তু ইসলামের নবী মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) শ্রমকে শ্রদ্ধা করতে, শ্রমিককে তার ন্যায্য অধিকার দিতে স্পষ্ঠ নির্দেশনা দিয়েছেন। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- أَعْطُوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ، قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক আদায় করো।
ইসলামে কষ্টার্জিত উপার্জনকে সর্বোত্তম বলা হয়েছে। হাদীসে এসেছে-
مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَّأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ وَإِنَّ نَبِىَّ اللهِ دَاؤُوْدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ
-কারো জন্যে নিজ হাতে উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য আর নেই। আল্লাহর নবী দাঊদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করতেন।
ইসলাম ভিক্ষা করাকে নিরুৎসাহিত করেছে। নিজে কাজ করে খাওয়াকেই উৎসাহিত করেছে। নামায, রোযা সহ বিভিন্ন ফরয ইবাদতের পাশাপাশি নিজের জন্যে, নিজের পরিবারের জন্যে হালাল রুযী অর্জন করাও ফরয। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ
-তোমরা নামায শেষ করে যমীনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো।
হালাল উপার্জন করা আমাদের সকলের জন্যে আবশ্যক। উপার্জনের মাধ্যম আমাদের সকলের এক হয় না। এখানে আমরা কেউ মালিক আবার কেউ শ্রমিক। আমরা কেউ অফিসের কর্মকর্তা আবার কেউ আমাদের অধীনস্ত। কিন্তু সকলের উদ্দেশ্য এক। হালাল উপার্জন করা। আমাদের অধিনস্ত যারা আছে তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি দেখানো উচিত। কেননা তারাও আমাদের ভাই। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
إخوانكم خُوَلُكم، جعلهم الله تحت أيديكم، فلا تُكَلِّفُوهم ما يغلبهم، فإن كَلَّفتموهم فأعينوهم
-তোমাদের অধিনস্তরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধিনস্ত করে দিয়েছেন। তাদের সাধ্যাতীত কাজ তাদের উপর চাপিয়ে দিও না। যদি চাপাতে চাও তাহলে তাদের সাহায্য করো।
এক সাহাবী তার গোলামকে নিয়ে বের হয়েছেন। পথিমধ্যে লোকজন চিনতে পারে নাই মুনিব কে আর গোলাম কে। তারা এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন তোমরা কি রাসূল (সা.)-এর হাদীস শুনো নাই? রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরবে তাদেরকেও তা পরাবে।
শ্রমিকদের প্রতি আমাদের দয়া করা আমাদের কর্তব্য। এটা শ্রমিকদের হক। যে কাজ শ্রমিকের জন্য কষ্টকর সে কাজ তাদের দিয়ে করানো একপ্রকার অত্যাচার। তাদের প্রতি দয়া দেখাতে হবে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন الراحمون يرحمهم الرحمن দয়াশীলের প্রতি রহমান (আল্লাহ) দয়া করেন। তিনি আরো বলেন من لا يرحم لا يرحم যে দয়া করে না সে দয়া পায় না। শ্রমিককে তার যথাযথ মজুরী প্রদানে জোর তাকীদ এসেছে। আল্লাহ তাআলা নির্যাতিত শ্রমিকদের পক্ষে থাকেন। হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
ثلاثة أنا خَصمُهم يوم القيامة: رجل أَعطي بي ثم غدر، ورجل باع حرا فأكل ثمنه، ورجل استأجر أجيرا فاستوفى منه ولم يعط أجره
আল্লাহ তা‘আলা ফরমান, আমি কিয়ামতের দিন তিন শ্রেনীর মানুষের বিরুদ্ধে বাদী হবো। প্রথমত এমন লোক যে আমার নামে কাউকে অঙ্গীকার করলো অত;পর গাদ্দারী করলো, দ্বিতীয়ত এমন লোক যে স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করল এবং এর মূল্য খেলো, তৃতীয়ত এমন লোক যে কোন শ্রমিক নিয়োগ করলো আর সেই শ্রমিক যথাযথভাবে তার দায়িত্ব আদায় করলো, কিন্তু তার পারিশ্রমিক আদায় করেনি।
এই তিন শ্রেনীর লোকের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বাদী হবেন।
শ্রমিকদেরও অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। যখন কোন কাজ আদায় করবে তখন যথাযথভাবে আদায় করবে, কাজকে নিজের মনে করে সুন্দরভাবে করবে। হাদীস শরীফে এসেছে-
إِنَّ اللهَ تَعَالَى يُحِبُّ مِنَ الْعَامِلِ إِذَا عَمِلَ أَنْ يُّحْسِن
সুন্দরভাবে কাজ সম্পাদনকারী শ্রমিককে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।
শ্রমিকরা নিজেদেরকে নির্যাতিত মনে করলে তারা নিয়মের মধ্যে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে এর প্রতিবাদ করতে পারে। কিন্তু রাগ-বিরাগ বা আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের কল-কারখানা, অফিসের ক্ষতি সাধন উচিত নয়।কেননা এটাই তার রিযিক পাওয়ার মাধ্যম। হাদীসে এসছে من رزق في شيئ فليلزمهযাকে কোন মাধ্যমে রিযিক দেওয়া হলো, উচিত হলো সে তা আঁকড়ে থাকবে। অর্থ্যাৎ নিজের উপার্জনের মাধ্যমকে আল্লাহর নি‘আমত মনে করে তার মূল্যায়ন করতে হবে।
আজকে আমরা দুটি বিষয়ে আলাচনা করলাম। প্রথমত বিপদাপদ প্রসঙ্গ। আমরা জানতে পারলাম বিপ; আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। কখনো মানুষের গোনাহের কারণে আবার কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য।
দ্বিতীয়ত আমাদের অধীনস্ত মানুষদের প্রতি সদাচরণ করা ইসলামের নির্দেশ। বিশেষত শ্রমজীবি মানুষের প্রতি আমাদের সদাচরনের জন্য প্রিয়নবী (সা.) জোর তাকীদ প্রদান করেছেন। আল্লাহ উত্তম তৌফিক দাতা।
১.০৫.১৫
[অনুলিখন : মাওলানা মাহমুদুল হাসান]

সোমবার, ৪ মে, ২০১৫

রজব মাস হলো রামাদ্বান মাসের প্রস্তুতির মাস


মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী
الحمد لله المتقدس بنعوت الكمال، المتعالي علي عباده بصفات الجلال، الي عباده بصفات الجمال، نحمده حمد الشاكرين لفضله، المقرين بألوهيته ووحدانيته، ونصلي ونسلم علي سيدنا محمد، السابق إلي الأنام نورُه، والرحمة للعالمين ظهورُه، صلوةً تستغرق العد، وتحيط بالحد، لا أمد لها، ولا انقضاء لها، ولا انفصام لها، ولا انقطاع لها، وعلي اله الأطهار وصحبه الأبرار. أما بعد-
আলহামদুলিল্লাহ! আমরা রজব মাসের প্রথম জুমু‘আয় উপস্থিত হতে পেরেছি। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। রজব মাস মুসলমানদের কাছে বিশেষ একটি কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি এই মাসে মহান আল্লাহ তা‘আলা তার প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরশে আযীমে নিয়ে মি’রাজ করিয়েছেন। ইসরাকে (মক্কা শরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত) অস্বীকার করা কুফরী। মহান আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে ফরমান-
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ.
-পবিত্রতা ও মহিমা সেই মহান সত্ত্বার যিনি তার বান্দাহকে রাতে ভ্রমন করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত-- যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি-- তাঁকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শুনেন এবং সব কিছু দেখেন।
রজব মাস রাসূল (সা.)-এর মি‘রাজের মাস। এই মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়। হাদীস শরীফে এসেছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) বলেন-
وَإِنَّمَا سُمِّيَ رَجَبٌ ، لأَنَّ الْمَلائِكَة تَرْجُبُ فِيهِ بِالتَّسْبِيحِ وَالتَّحْمِيدِ وَالتَّمْجِيدِ لِلْجَبَّارِ عَزَّ وَجَلَّ.
-রজব মাসকে রজব বলার কারণ হলো এই মাসে ফিরিশতারা বেশি বেশি মহান আল্লাহর তাসবীহ, তাহলীল এবং তাহমীদ করেন। আমাদেরকেও এর সাথে বেশি বেশি তাসবীহ পড়া উচিৎ। বুখারী শরীফের শেষ হাদীস, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
كَلِمَتَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ.
-দু’টি শব্দ মহান আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয়, যা উচ্চারণে অতি হালকা কিন্তু মিযানের পাল্লায় খুবই ভারি, শব্দ দু’টি হলো- سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ
রজব মাস সম্পর্কে আবুল ওয়াররাক বলখী (র.) বলেন-
شهر رجب شهر الزرع وشعبان شهر السَّقِي للزرع، وشهر رمضان شهر حصاد الزرع.
-রজব হলো চারা রূপনের মাস, শা‘বান হলো পানি সিঞ্চনের মাস আর রামাদান হলো ফল আহরণের মাস।
সুতরাং রজব মাস থেকে আমাদেরকে রামাদানের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
হাদীস শরীফে আরো এসেছে-
كان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا دخل رجب قال : اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان
-রজব মাস আসলে রাসূল (সা.) দু‘আ করতেন-হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে রজব এবং শা‘বান মাসের বরকত দান করো আর রামাদান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।
হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
إِنَّ فِي الْجَنَّةِ نَهْرًا ، يُقَالُ لَهُ : رَجَبٌ ، مَنْ صَامَ مِنْ رَجَبٍ يَوْمًا وَاحِدًا ، سَقَاهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ النَّهْرِ.
-জান্নাতে একটি ঝর্ণা আছে যার নাম রজব। যে ব্যক্তি রজবে একটি রোযা রাখবে মহান আল্লাহ তাকে এই ঝর্ণার পানি পান করাবেন।
মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে রজবের আমল করার তাওফীক দান করেন। আমীন।
.................
ভারত উপমহাদেশ এবং আমাদের দেশের মুসলমানদের কাছে রজব মাস আরো দু‘টি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো এই মাসের ৬ তারিখ অর্থাৎ ৬ রজব সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা গরীবে নেওয়ায শাহ মুঈনুদ্দীন চিশতী সনজরী আজমিরী (র.)-এর ওফাত দিবস। আর ২০ রজব হযরত খাজা শরফুদ্দীন চিশতী (র.)-এর ওফাত দিবস।
ভারত উপমহাদেশে ইসলাম আগমন সম্পর্কে সকল ঐতিহাসিক একমত যে এ উপমহাদেশে আউলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার হয়েছে। সুফিয়ায়ে কেরাম ইসলামের পতাকা উড়িয়েছেন। সে জন্যে উপমহাদেশে ও আমাদের দেশের মুসলমানগণ তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (র.) সহ অন্যান্য আউলিয়ায়ে কেরাম এ দেশে তরবারীর জোরে ইসলাম প্রচার করেন নি। তাঁরা তাদের আদর্শ, মহত্ত্ব দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন।
খাজা আজমীরী (র.) যখন ভারতে আসেন তখন আজমীরের শাসক ছিল পৃথ্বিরাজ। সে ছিল খুবই অত্যাচারী শাসক ছিল। রাজা পৃথ্বিরাজ কোন এক মুসলমানকে ( সম্ভবত তাঁরই দরবারের সাথে সম্পর্কিত কেউ হবেন)- কষ্ট ও বিপদের মধ্যে ফেলেন। এর প্রতিকার চেয়ে হযরত খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতী (র) পৃথ্বিরাজকে একটি পত্র লিখেন। পৃথ্বিরাজ অত্যন্ত গর্বভরে অবমাননাকর ভাষায় ঐ পত্রের জবাবে বলেন- ‘এই লোকটি এখানে আসার পর এমন বড় বড় কথা বলে যা কেউ কখনও বলেনি এবং শুনেও নি।’ হযরত খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতী (র) ঐ জবাব শুনে বললেন, ‘ আমি পৃথ্বিরাজকে জীবিত বন্দী করে মুহাম্মাদ ঘুরীর হাতে তুলে দিলাম’। সেই রাতে মুহাম্মদ ঘুরী স্বপ্নে দেখেন কোন এক বুযুর্গ তাকে বলছেন- কাল যদি তুমি ভারত আক্রমন করো তাহলে তুমি ভারত জয় করতে পারবে। মুহাম্মদ ঘুরী ইতিপূর্বে ভারত আক্রমন করে ব্যর্থ হয়েছেন। এ স্বপ্ন দেখার পর সভাসদদের সাথে আলোচনা করে ভারত আক্রমন করেন। মুহাম্মদ ঘুরী ভারত জয় করেন এবং পৃথ্বিরাজকে বন্দী করেন। মহান আল্লাহ তার ওলীর কথাকে সত্যে পরিণত করলেন। ঘটনাটি আবুল হাসান আলী আন-নদভী তার “দা‘ওয়াত ও আযীমত” কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (র.) “আখবারুল আখয়ার” কিতাবে লিখেন- হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (র.)-এর ইন্তিকালের পর তার কপালের উপর লেখা ফুটে উঠে- حبيب الله مات في حب الله “আল্লাহর বন্ধু, আল্লাহর ভালোবাসায় ইন্তিকাল করেছেন”। জানা যায় তার কপালে এই লেখা দেখে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করে।
খাজা ছাহেব (র.)-এর সময়ে ভারতে যাদুবিদ্যার প্রচলন খুব বেশি ছিল। যে যুগে যে সব বিষয়ের বেশি প্রচলন ছিল আল্লাহ তাআলা সে যুগের নবীকে উক্ত বিষয়ের মু‘জিযা দান করেছেন। হযরত মুসা (আ.)-এর সময়ে যাদুর চর্চা ছিল। এই সকল যাদুকরের যাদুকে অক্ষম করতে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) কে লাঠি ও শুভ্র হাত দিয়েছেন। ঈসা (আ.)-এর যুগে চিকিৎসা বিষয়ে মানুষ পারদর্শী ছিল। তাই তাঁকে আল্লাহ তা’আলা জন্মান্ধ ও ধবল রোগীকে সুস্থ করার মু’জিযা প্রদান করেন। আমাদের নবী (সা.)-এর সময়ে কবিতা চর্চার প্রচলন ছিল ব্যপক। তৎকালীন প্রসিদ্ধ কবিগণ বিভিন্ন মেলায় কবিতার আসর করত, চর্চা করত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন নাযিল করে এই সব কবিদের কাব্যপ্রতিভাকে অক্ষম করে দিলেন। মহান আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করলেন এর ছোট একটি আয়াতের সমান আয়াত রচনা করতে। কিন্তু তারা তা পারে নি।
আল্লাহ তাআলা নবীদেরকে অলৌকিক যে ক্ষমতা দান করেন তাকে মু‘জিযা বলে আর ওলীগণকে যে ক্ষমতা দান করেন তাকে কারামত বলে। কারামত সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদা কি, সে সম্পর্কে আকাইদে নাসাফীতে বলা হয়েছে- كرامة الأولياء حق-আউলিয়ায়ে কেরামের কারামত সত্য।
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (র.) সব সময় ওযূর সহিত থাকতেন, সারাজীবন দিনে রোযা রাখতেন রাতের বেলা ইবাদত করতেন। দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দু’বার কুরআন শরীফ খতম করতেন।
আগে একবার বলেছি যে ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করেছেন আউলিয়ায়ে কিরাম। তাঁরা তাদের আদর্শ দিয়ে মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে এসেছেন। হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রা.) (র.) ছিলেন সিজিস্তানের মানুষ। তিনি স্থানীয় ভাষা বুঝতে পারতেন না। হযরত শাহজালাল মুর্জারাদে ইয়ামনী (র.) ছিলেন ইয়ামনের অধিবাসী, আরবী ভাষাভাষী। তিনি বাংলা বুঝতেন না। এখানে যারা বাসিন্দা ছিলেন তারাও আরবী বুঝতেন না। তাহলে তারা কিভাবে ইসলাম প্রচার করলেন? তাদের কথা মানুষ কিভাবে বুঝতো অথবা তারা কিভাবে মানুষের কথা বুঝতেন? মানুষ তাদের চেহারা দেখে, তাদের আদর্শ দেখে মুসলমান হয়েছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন إذا رؤوا ذكر الله -ওলী হচ্ছেন তিনি যাকে দেখলে মহান আল্লাহকে স্মরণ হয়।
আমরা এই সব মহান বুযুর্গদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের উচিত তাদের জন্য দু‘আ করা। তাদের জন্যে দু‘আ করলে আমরাই উপকৃত হবো। আমরা তাদের রূহানী ফায়য লাভ করতে পারব। দু’রাকাআত নামায পড়ে অথবা কুরআন তিলাওয়াত করে, সাদকাহ করে অথবা অন্য নেক আমল করে তাদের রূহের উদ্দেশ্যে ঈসালে সাওয়াব করতে পারি। রূহ মারা যায় না। মুসলমান হোক অথবা বিধর্মী হোক, কারো রূহ মারা যায় না। কুরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছি।
হযরত আজমীরী (র.) সম্পর্কে আমাদের পীর ও মুরশিদ হযরত আল্লামা আব্দুল লতীফ ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর একটি ঘটনা মনে পড়ল। হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলা (র.) বলেন আমি ছাত্র জীবনে আযমিরী (র.)-এর মাযারে খুব বেশি আসা-যাওয়া করতাম। একদিন আযমিরী (র.) আমাকে বলছেন- এখানে বেশি আসার প্রয়োজন নেই। বদরপুরেই থাকো। ওখান থেকেই তুমি সবকিছু হাসিল করতে পারবে। ছাহেব কিবলাহ (র.) স্বপ্নে না মুরাকাবায় সাক্ষাৎ করেছেন তা আমাদের বলেন নি। সুবহানাল্লাহ। এটাই হচ্ছে ওলীদের ক্ষমতা। ইন্তেকালের পরেও তারা সঠিক পথ দেখাতে পারেন।
আউলিয়ায়ে কেরামের দরগাহ গরীব-অসহায়দের আবাসস্থল। আমাদের সামনে যিনি শুয়ে আাছেন খাজা শরফুদ্দীন (র.), তার দরগাহতে প্রতিদিন কয়েকশ’ গরীব-অসহায়কে খাদ্য বিতরণ করা হয়। আমাদের কারো বাড়িতে কি সম্ভব প্রতিদিন দুইশত মানুষকে খাবার প্রদান করা? সম্ভব নয়। ওলীগণের ইীন্তকালের পরেও মানুষ তাদের কাছ থেকে উপকৃত হয়।
আমরা আউলিয়ায়ে কেরামের মাযারে যাই। সুন্নত নিয়মানুযায়ী মাযার যিয়ারত করি। তাদের ওসীলা নিয়ে আল্লাহর দরবারে দু‘আ করি। উমাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম গরীব মুহাজিরদের ওসীলায় বিজয়ের দু‘আ করতেন। (শরহুস সুন্নাহ)
আমরা ওলীর কাছে চাই না বরং তার ওসীলা নিয়ে আল্লাহর দরবারে দুআ করি। এখন কিছু ভ-ের কারণে তো আমরা হক্কানী ওলীদের থেকে দূরে থাকতে পারি না। আসলের সাথে নকল সব সময় ছিল, থাকবে। তাফসীরের ক্ষেত্রেও ভেজাল করা হয়েছে। শি‘আ, মু‘তাযিলা, খারেজীরা তাদের ইচ্ছামতো কুরআন শরীফের তাফসীর করেছে, তাফসীর বির রায় করা হয়েছে। তাই বলে কি আমরা সঠিক তাফসীরগুলো ছেড়ে দিব? রাসূল (সা.)-এর ওফাতের কিছুকাল পরেই হাদীসের ক্ষেত্রে জাল হাদীস রচনা শুরু হয়। স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজ স্বার্থে হাদীস বানাতো। এক মুসলিম বাদশাহকে এক বেগুন বিক্রেতা তার বেগুনের গুনাবলী বর্ণনা করার জন্যে বানিয়ে বললো রাসূল (সা.) ইরশাদ বরেছেন- বেগুন সকল রোগের ঔষধ। রাসূল (সা.)-এর হাদীস শুনে খলীফা বেগুন নিলেন। খাওয়ার পর তার চুলকানী রোগ হয়ে গেল। বাদশাহ বিক্রেতাকে ধরিয়ে এনে বললেন তুমি বললে সকল রোগের ঔষধ কিন্তু আমার তো চুলকানী হয়ে গেছে। তখন সে বলল ওহ! আমি ভূলে গিয়েছিলাম। হাদীসে ছিল চুলকানী রোগ ছাড়া সকল রোগের ঔষধ।
এভাবে নিজ স্বার্থে কিছু লোক হাদীস বানিয়ে রাসূল (সা.)-এর নামে চালিয়ে দিত। জাল হাদীসের ছড়াছড়ি শুরু হলো। তাই বলে কি আমরা মূল হাদীস ছেড়ে দিব? যে কোন ভালো ভালো পন্য বাজারে আসলে তার নকলও বের হয়। সে জন্যে তো আমরা আসলকে ছেড়ে দেই না। তদ্রুপ তাসাউফের নামে ভ-ামী করলে আমরা ভ-ামী থেকে দূরে থাকবো কিন্তু হাক্কানী ওলী আউলিয়াকে ত্যাগ করতে পারি না। তাদের আদর্শ অনুসরণ করব। কারণ যাকে মুহাব্বাত করা হয় তার সব কিছু অনুসরণ করতে হয়। এক কবি বলেন- إن المحب لمن يحب مطيع
আউলিয়ায়ে কিরামের আদর্শ ছিল মানুষকে তাওহীদ-রিসালতের পথে আহ্বান করা, অসহায় দুঃস্থ মানুষের সেবা করা, দ্বীনের খেদমত করা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- صِبْغَةَ اللَّهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً
আউলিয়ায়ে কেরাম আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গিন ছিলেন।
মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে আউলিয়ায়ে কিরামের অনুসরণের তাওফীক দান করেন। আমীন।
..................
এখন নামায সম্পর্কে দু’টি কথা বলতে চাই। আমরা যখন একাকী নামায পড়ি তখন সূরা আসর এবং কাউসার পড়ে দায় সারি। কিন্তু ইমামতির সময় লম্বা সূরা পাঠ করে মানুষের বিরক্তি বাধিঁয়ে দেই।
জামা‘আতের সহিত নামায আদায় করলে আমাদের নামায কেমন হওয়া উচিৎ প্রিয়নবী (সা.) থেকে এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা পাই।। একবার হযরত মু‘য়ায বিন জাবাল (রা.) নামাযের ইমামতি করছেন। তিনি নামাযে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত শুরু করলেন। একজন নামায ছেড়ে দিয়ে একাকী সংক্ষিপ্তভাবে নামায পড়লেন। তখন তাকে মু‘আয (রা.) মুনাফিক বলে ধারনা করলেন। লোকটির কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা হাত দিয়ে খেটে খাওয়া এবং উট দিয়ে পানি সিঞ্চনকারী লোক। মু‘আয নামাযে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত শুরু করছেন। তাই আমি একা নামায সংক্ষেপে আদায় করে চলে গেছি। ফলে তিনি আমাকে মুনাফিক ধারণা করেছেন। রাসূল (সা.) তিনবার বললেন হে মু‘আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি করছ? (জামা‘আতে নামায আদায় করলে) সূরা শামস এবং আ‘লা দিয়ে পড়বে। আরেক বর্ণনায় আছে, সূরা শামস এবং আ‘লা দিয়ে পড়বে কেননা তোমাদের পিছনে বৃদ্ধ, দূর্বল এবং হাজতওয়ালা লোক নামায আদায় করে।
তাই আমরা যখন জামা‘আতে নামায পড়ব সংক্ষিপ্ত নামায পড়ব। একাকী হলে যত ইচ্ছা লম্বা নামায পড়ব। হাদীসে এসেছে-
وعن أبي هريرة - رضي الله عنه : أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قال: إذا صلى أحدكم للناس فليخفف؛ فإنه منهم الضعيف، والسقيم، والكبير، وإذا صلى أحدكم لنفسه فليطول ما شاء.
-হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমরা যখন মানুষকে নিয়ে (জামা‘আতে) নামায আদায় করো তখন সংক্ষিপ্তভাবে পড়। কেননা তাদের মধ্যে দূর্বল, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ লোক থাকে। আর যখন একাকী নামায পড় তখন যতক্ষন ইচ্ছা লম্বা করো।
(সুপ্রিম কোর্ট মাজার মসজিদে জুমআপূর্ব বয়ান, ৪-০৫-২০১৫
অনুলিখন : মাহমুদুল হাসান)