বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

মুসলিম চেতনায় বালাকোট ও সৈয়দ আহমদ শহীদ (রহঃ)

কাযী মুহাম্মদ আবুল বয়ান এম.আর. রহমান হাশেমী : হয়রত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) যিনি তেরোশ’ হিজরীর মোজাদ্দেদ হিসেবে তরীকায়ে মোহাম্মদীয়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চারটি তাওয়াজ্জুহ্ বিশিষ্ট নির্ভেজাল সিলসিলার ইমাম ছিলেন। তাঁর প্রায় শ’খানেক খোলাফা দ্বারা উপমহাদেশে ও বহির্বিশ্বে এখনও তাঁর সিলসিলাগুলো জারী রয়েছে। যা আমলের মাধ্যমে সাধারন মুসলমান মোমেনে কামেল ও অলীয়ে কামেল হিসেবে কবুল হচ্ছেন। এ পন্থায় আজকের মুসলমান সমাজে এবং দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের এক অনন্য তাজদিদী বিপ্লব পরিচালিত হয়েছে ও হচ্ছে। সিল্সিলা গ্রহনের মাধ্যমে এ শতাব্দীতে বিশ্বের মুসলমান অশান্তির কালো মেঘের নীচে খুঁজে পাচ্ছেন শান্তির আবেশ ও পরশ। মুসলমান জন সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও পালিত হচ্ছে প্রকৃত ইসলামী জিন্দেগী। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মুসলমানদের অসহযোগী মনোভাব আর হিন্দুদের অনুগত সমর্থন-এ দুই নিয়েই শুরু হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশ শাসন। মুসলমানরা এ পরিবেশকে ‘‘দারুল র্হব’’ বা শত্র“ কবলিত এলাকা বলে ঘোষনা করলো। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী ‘‘দারুল র্হব’’ এমন এলাকাকে বুঝায়, যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অথবা সেখান থেকে হিজরত করা মুসলমানদের জন্য ফরজ-অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়ে। বিদেশী ইংরেজ বেনিয়াদের সাথে ষড়যন্ত্র করে অনুগত হিন্দুরা মুসলমানদেরকে শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকেই বিচ্যুত করেনি, বরং তাদেরকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও চরম দেউলিয়াপনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। উপমহাদেশে ‘‘দারুল র্হব’’-এ উপলবব্ধির ফলেই এই অঞ্চলের মুসলমানেরা ইংরেজ শক্তির উপর বার বার বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। সতেরশ সাতান্নর পর থেকে শুরু করে পুরো একশতকেরও অধিকাকাল মুসলমানেরা দেশটিকে প্রজ্বলিত রেখেছিল বিদ্রোহের অনলে, এবং এরই চরম বিস্ফোরিত রূপ দেখা দিয়েছিল আঠারোশত সাতান্ন’র সারাদেশ ব্যাপী গণ আন্দোলন তথা সিপাহী বিদ্রোহ, এর পরে ছিল আঠারশত চৌষট্টির সীমান্ত অভিযান। সতেরশত পঁয়সট্টির ফকির বিদ্রোহ দিয়ে এ সংগ্রামের অধ্যায়ের সূচনা। মাঝখানে তিতুমীরের বিদ্রোহ, হাজী শরীয়তুল্লাহ ও দুদুমিয়ার আন্দোলনে সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী (রহঃ) এর অভ্যূদয় সর্বশেষ পাটনা, আম্বলার ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে সে সশস্ত্র সংগ্রাম অধ্যায়ের ঘটে পরিসমাপ্তি। একদিকে মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবসান, অপরদিকে বর্বর মারাঠাদের উপর্যুপরি আক্রমন, পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিজয়, পাঞ্জাবে শিখদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, এসব পরিবেশ পরিস্থিতির সমন্বয়ে উপমহাদেশের অধিবাসীদের ঘাড়ে তাদের ভাগ্য নিয়ন্তা হিসেবে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসলো ইংরেজ আধিপত্যবাদ। নিজেদের চরম অবহেলার ফলে সবকিছু হারিয়ে ফেলার পর মুসলমানরা তাদের শেষ সম্বল ‘‘ঈমান’’ টুকু হারাতে রাজী হলনা। চারিদিকের প্রতিবন্ধকতা আর চাপের মুখে এবং অনুশোচনার তীব্র কষাঘাতে তাদের মধ্যে ঈমানী চেতনার বাণ ডাকলো। দেশে প্রতিকূল পরিবেশ থাকায় কৌশলগত কারণে সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে অগ্রসর না হয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। প্রথম থেকেই আন্দোলনের ব্যাপারে তাদের একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা হচ্ছে এই যে, ইসলামের সত্যিকার আদর্শ থেকে বিচ্যুতিই হচ্ছে মুসলমানদের পতনের মূল কারণ। তাই কুরআন ও হাদীসের প্রতি কঠোর আনুগত্যকে ভিত্তি করেই তৎকালীন মুসলমানদের সংগঠনগুলো গড়ে উঠেছিল। এ ধরনের একটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী রহ্মতুল্লাহ্ িতায়ালা আলায়হি। ত্বরীকায়ে মুহাম্মদী (দঃ) আন্দোলন ঃ- আমীর খান পিন্ডারীর বাহিনীতে যোগদানের পর প্রাথমিক পর্যায়ে কেউ তাঁকে চিনতো না, উন্নত ব্যক্তিত্ব এবং চারিত্রিক মাধূর্যের কারণে মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সকলের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং বুদ্ধিমত্তার ফলে নবাব সাহেব তাঁকে খুব সম্মান করতেন। এমনকি সব ব্যাপারে সৈয়দ সাহেবের পরামর্শ গ্রহন এবং তা বাস্তবায়ন করতেন। সেনাবাহিনীতে চাকুরী করার পরও সৈয়দ সাহেব সুয়োগ পেলেই নফল নামাজ পড়তেন। আশেপাশে দাওয়াতী কাজ করার মত লোক না পেলেও তিনি চাদর মুড়ি দিয়ে নিরিবিলিতে প্রভুর মোরাকাবা মোশাহাদায় সময় অতিবাহিত করতেন। নবাব আমীর খান ইংরেজদের সাথে সন্ধি করতে চাইলে তাঁর মন্ত্রী পরিষদের প্রায় সকলেই ঐক্যমত প্রকাশ করলেন। কিন্তু সৈয়দ সাহেব এই সন্ধির প্রবল বিরোধিতা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরুন, আল্লাহর সাহায্য আসবে, জয়লাভ করলে গাজী হব, মরলে শহীদ হবো। কোন মতেই তাদের সাথে সন্ধি করা ঠিক হবে না। আর যদি আপনি ইংরেজদের সাথে সন্ধি করেন, তাহলে আমি আপনার সঙ্গে থাকবোনা।’’ সন্ধির পর নবাব সাহেবের বহু অনুরোধ সত্তেও সৈয়দ সাহেব তাঁর কয়েকজন সাথীসহ বাহিনী ত্যাগ করে জয়পুর চলে যান। অতঃপর দিল্লী গিয়ে শিক্ষাগুরু শাহ্ আবদুল আজীজ দেহলবী (রহঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। শাহ্ সাহেব দোয়া করলেন। এবার সৈয়দ আহমদ মুসলিম সমাজ থেকে কুসংস্কার বিদূরীত করার কাজ শুরু করেন এবং এ উদ্দেশ্যে ব্যাপক কর্মী সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করেন। কুসংস্কারচ্ছন্ন মুসলিম সমাজকে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর মূল শিক্ষার দিকে ফিরে আসার আহবান জানাতেন বিধায় সৈয়দ সাহেবের নীতিসমূহ ত্বরীকায়ে মুহাম্মদী (দঃ) হিসাবে ইতিহাসে খ্যাতি অর্জন করে। সর্ব প্রথম সৈয়দ সাহেব উত্তর ভারতের রোহিলা সম্প্রদায়কে আন্দোলনের দাওয়াত দেন এবং তাদেরকে কর্মী হিসেবে গ্রহণ করেন। সেখান থেকে দিল্লী পৌঁছার কিছু দিন পর অর্থাৎ তাঁর সাংগঠনিক তৎপরতার প্রথম দিকেই কয়েকজন প্রখ্যাত ব্যক্তি এ আন্দোলনে শরীক হন এবং সৈয়দ আহমদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন। এঁদের মধ্যে সর্ব প্রথম আনুগত্য গ্রহণ করেন শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবীর বড় ভাই শাহ আবদুল্লাহর পৌত্র মৌলবী ইউসুফ। তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সৈয়দ সাহেবের বন্ধু এবং নির্ভরযোগ্য পরমর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন। সৈয়দ সাহেবের সাথে দেহলবী বংশের নেতৃস্থানীয় লোকদের যোগদানের ফলে উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেল। দেহলবী বংশের প্রভাব ও ব্যক্তিত্বের কারনে অসংখ্য মুসলমান সৈয়দ আহমদের ত্বরীকায়ে মুহাম্মদী আন্দোলনে যোগদান করেন। এতে করে ইসলামের একজন মহান শিক্ষক হিসাবে সৈয়দ আহমদ প্রসিদ্ধ লাভ করেন। লক্ষৌ সফরের সময় যে সমস্ত বিখ্যাত ব্যক্তি সৈয়দ সাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন তাঁদের তালিকায় মাওলানা ঈমাম উদ্দীন বাঙ্গালীর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার অধিবাসী ছিলেন তিনি। সৈয়দ সাহেবের খুবই অনুুরক্ত ছিলেন। বাইয়াত গ্রহনের পর থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত সৈয়দ সাহেবের সাথী ছিলেন। আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে আরেকজন বাংলাভাষী মুসলমানদের নাম পাওয়া যায় তিনি হচ্ছেন শেখ বুরহানউদ্দিন বাঙ্গালী। ইনিও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সৈয়দ সাহেবের সাথী ছিলেন। হজ্জে যাওয়ার সময় সৈয়দ সাহেব বহুস্থান সফর করেন এবং দাওয়াতের কাজ চালাতে থাকেন। সৈয়দ সাহেবের এই সফরের সময় কোলকাতায় অবস্থানরত টিপু সুলতানের পুত্রগণ এবং তাদের স্ত্রীগণ তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন। বার্মার জনৈক ব্যবসায়ী প্রায়ই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কোলকাতা সফর করতেন। সৈয়দ সাহেবের কোলকাতা অবস্থানের সময় সৈয়দ হামযা নামক এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাইয়াত গ্রহণ করেন। সাধারনতঃ বার্মার লোকদের দাঁড়ি খুব কম হয়, কিন্তু সৈয়দ হামযার দাঁড়ি ছিল ঘন এবং দীর্ঘ। তাই বার্মার শাসকগোষ্ঠীর নিকট তিনি খুব সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। সৈয়দ হামযা দেশে ফিরে মুসলমান জনসাধারন এবং প্রশাসনের বিভিন্ন মুসলিম কর্মকর্তার নিকট আন্দোলনের দাওয়াত দিলে বহু লোক তা গ্রহণ করেন। এভাবে ত্বরীকায়ে মুহাম্মদী আন্দোলনের দাওয়াত বার্মায়ও প্রসার লাভ করে। ১২২৪ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যেই উপমহাদেশের সর্বত্র এ আন্দোলন সম্প্রসারিত হয়ে পড়ে। সৈয়দ আহমদ এ বি¯তৃত ভূখন্ডে সর্বস্তরের মানুষের আশা-আকাংখার মূর্ত প্রতীক হিসাবে আবির্ভূত হন। জিহাদের প্রস্তুতি ঘোষনা ঃ হজ্জ্ব থেকে প্রত্যাবর্তনের পর একদিন সৈয়দ সাহেব রায়বেরেলীতে তাঁর সহকর্মীদের সাথে যিকির-আযকারে মশগুল ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি সকলকে ডেকে বললেন, ‘‘যিকির বন্ধ করুন, এখন থেকে জিহাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অধিকাংশ সময় ব্যয় করত হবে।’’ অনেকই বিস্মিত হলেন। প্রশ্ন উঠলো, যিকিরের মত নেকীর কাজ বাদ দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন কি ? উত্তরে সৈয়দ সাহেব বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যিকির আযকারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের সামনে উপস্থিত। আল্লাহর নামে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। জিহাদের সামনে অন্যসব নফল ইবাদত মূল্যহীন। জিকির-আযকার হচ্ছে জিহাদের পরবর্তী কাজ। আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার ঃ ইংরেজগণ আন্দোলনের ব্যাপকতা দেখে ক্রমেই ভীত হত লাগল এবং উপমহাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে দেয়। যেখানে সৈয়দ আহম্দ সরাসরি বৃটিশ শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেখানে কর্মীদের মধ্যে জিহাদের উদ্দিপনাকে নিস্তেজ করে দেওয়ার জন্য ইংরেজগণ প্রচার করলো যে, সৈয়দ সাহেব ইংরেজদের শুভাকাংখী এবং বন্ধু। দ্বিতীয়তঃ সৈয়দ সাহেবের ধর্ম বিশ্বাস সর্ম্পকেও বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি প্রচার করা হতো। বিশেষভাবে এই আন্দোলনকে ‘‘ওয়াহাবী আন্দোলন’’ বলে প্রচার চলতো। সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজরা সৈয়দ সাহেবকে সুন্নী বিরোধী একজন ওয়াহাবী বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। তৃতীয়তঃ শিয়া মতবাদের মধ্যে বেশ কিছূ বিদ’য়াতী আনুষ্ঠানিকতা থাকায় সৈয়দ সাহেব ও তাঁর সাথীরা বিভিন্নভাবে এর বিরোধিতা করতেন। ইংরেজগণ এটাকে সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে শিয়া মতবলম্বীদের মধ্যে সৈয়দ সাহেবের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতো। যেহেতু নাব পরিবার সমূহে শিয়া মতবাদ বিস্তার লাভ করছিল। চতুর্থতঃ ইংরেজগণ বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে সৈয়দ সাহেবের কয়েকজন সহচরকে ক্রয় করতে চেয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। পঞ্চমতঃ ইংরেজগণ নিরক্ষর, অশিক্ষিত, অজ্ঞ, ধর্মান্ধ বলেও সৈয়দ সাহেবের বিরুদ্ধে প্রচার করতো। জিহাদের উদ্দেশ্যে হিজরত ঃ একাধারে দশ মাস সকল দিকের প্রচার, জনসংযোগ এবং প্রস্তুতি গ্রহনের পর ১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৭ই জানুয়ারী সোমবার সৈয়দ সাহেব হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। জীবনের চল্লিশটি বছর যে অঞ্চলে কাটিয়েছেন, সেখানকার প্রতিটি অলিগলির সাথে স্থাপতি ছিল অন্তরের সম্পর্ক, সকল অত্মীয় স্বজনের মায়া মমতা পরিত্যাগ করে ফরজ জিহাদ আদায়ের উদ্দেশ্যে সৈয়দ সাহেব পা বাড়ালেন। সীমান্ত অঞ্চল ছাড়া উপমহাদেশের আর কোন এলাকা সৈয়দ সাহেবের পছন্দ হলো না। কারণ সীমান্ত অঞ্চলের সম্পূর্ণ এলাকা মুসলিম অধ্যুষিত ছিল। এলাকার জনসাধারণ যুদ্ধ বিদ্যায় ছিল পারদর্শী। তাদের একাগ্র সহযোগিতার আশায় সেখানে কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় সীমান্তবাসীরা শিখদের অত্যাচার নিপীড়নের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছিল। তাই অতি সহজে তাদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা যাবে বলে চিন্তা করা হয়েছে। সীমান্তের উত্তর-পশ্চিঞ্চলে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত মুসলমান অধিবাসী ছিল, প্রয়োজনে তাদের সাহায্য পাওয়ার আশা ছিল। সাহায্য না করলেও বিরোধিতার কোন আশঙ্কা ছিল না। এসব অনুকুল পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখে সীমান্তকে আন্দোলন এবং জিহাদের কেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু সীমান্তবাসীদের শেষ পর্যায়ের মোনাফেকীর কারণে সমস্ত সাধণা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এরপরও সাধারণ জ্ঞানে সৈয়দ সাহেবের সিদ্ধান্ত সার্বোতভাবে যুক্তিসংগত, মজবুত এবং সঠিক ছিল। সৈয়দ সাহেব রায়বেরেলী থেকে জিহাদের জন্যে রওয়ানা হওয়ার দশমাসের মধ্যে প্রায় তিন হাজার মাইল পথ অতিক্রম করেন। রায়বেরেলী থেকে বুন্দেলখন্ড, গোয়ালিয়র, টোঙ্ক, রাজপুতনা, সিন্ধু, বেলুচিস্তানের মরুভূমি, বিপদ সঙ্কুল পাহাড়-পর্বত এবং পানাহারের ভীষণ কষ্ট অতিক্রম করে পেশওয়ার হয়ে চরসাদ্দায় পৌঁছান। উপমহাদেশের ইতিহাসে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য এমন ত্যাগ আর কষ্ট স্বীকার করার দ্বিতীয় উদাহরন বিরল। যেমন ছিলেন ধৈর্যশীল নেতা, তেমনি কর্মী বাহিনী। সৈয়দ সাহেব এমনি একটি বজ্রকঠিন, ঐক্যবদ্ধ, সুশৃংখল, স্বার্থত্যাগী দল তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সীমান্তে পৌঁছার পর শিখদের সাথে ছোট ছোট কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। অতঃপর জিহাদের আমীর নির্বাচনের প্রশ্ন উঠলে হান্ডের পুকুর পাড়ে আন্দোলনের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের এক যৌথ সভায় ১৮২৭ খ্রীষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারী সৈয়দ সাহেবকে আমীর নির্বাচিত করা হয়। পরদিন জুমার খোতবায় সৈয়দ সাহেবের নাম সংযোজন করা হয়। শিখ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ঃ সীমান্ত মুসলিম জনবসতির উপর শিখদের অত্যাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় সৈয়দ সাহেব সর্বপ্রথম ১৮১৪ খ্রীষ্টাব্দে শিখদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। শিখদের জুলুমবাজী যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে, এমনকি তারা যখন মসজিদে আজান দেয়া বন্ধ করে দেয়, গরু জবাইকে করে বেআইনী। ১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দে সৈয়দ আহমদ কয়েক হাজার ঈমানদার মুসলমান মুজাহিদ নিয়ে শিখদের আক্রমণ করেন। জালিম শিখ শক্তির বিরুদ্ধে এই জিহাদে মুজাহিদ বাহিনীর ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। এই জিহাদে কেবল বাংলাদেশ থেকেই ১২ হাজার মুজাহিদ অংশ গ্রহণ করে। মুসলমানদের শিবির ছিল পাহাড়ী এলাকায়। আর শিখরা ছিল সমতল অঞ্চলে। মাঝে মধ্যে আক্রমণ পরিচালনা করে মুজাহিদরা শিবিরে ফিরে আসতো নিরাপদে। উইলিয়াম হান্টারের বর্ণনা অনুযায়ী “শিখরা সমতল ভূমি ছেড়ে পাহাড়ী এলাকায় মুসলমানদের শিবির আক্রমণ করার সাহস পেতনা।” ১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দে সৈয়দ আহম্দ এক প্রবল আক্রমণের মাধ্যমে শিখদের উপর বিজয় লাভ করেন। ১৮৩০ সালের জুন মাসে জেনারেল অলার্ড ও হরি সিং নালওয়ার শিখ বাহিনীর নিকট একবার পরাজিত হয়েও মুজাহিদ সৈন্যরা অকুতভয়ে পূণরায় সমতল ভূমি দখল করে এবং সে বছরেই পেশওয়ার তাদের হস্তগত হয়। সীমান্ত মুজাহিদ প্রেরণের ব্যবস্থাপনা ঃ- বৃটিশ, শিখ, হিন্দু, একই সাথে এ তিন শক্তির মোকাবেলায় জেহাদী বাহিনী সংগঠিত হতে লাগলো। অঞ্চলিক প্রতিনিধিরা উপমহাদেশের প্রতিটি শহরে আন্দোলনের সর্বশেষ খবরাখবর কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাংখীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেন। ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন ঃ- পেশওয়ার থেকে পাঞ্জতার আসার পর স্থানীয় সর্দারগণ সৈয়দ সাহেবকে অভ্যর্থনা জানান এবং তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পাঞ্জতার ও তার নিকট পার্শ্ববর্তী বিরাট এলাকায় মুসলিম জনবসতি ছিল। সৈয়দ সাহেব বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সর্দারদেরকে সাধারন বাইয়াত না করিয়ে শরীয়তের বাইয়াত করালেন এবং বললেন, এ এলাকার সব অধিবাসী মুসলমান। এখানে নির্বিঘেœ শরীয়তের হুকুম চালু করা যায়। আপনারা যদি এ এলাকায় শরীয়তের আইন চালু করেন, তাহলে আমি এখানে থাকবো। আর না হয় অন্যত্র চলে যাবো। সৈয়দ সাহেবের এই শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১২৪৪ হিজরীর পহেলা শা’বান পাঞ্জতারে আলেম ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের এক সভা আহবান করা হয়। সভায় সীমান্ত খান ও আমীরগণ ছাড়াও প্রায় দু’হাজার আলেম উপস্থিত হন। যীদার আশরাফ খান এবং হান্ডের খাবে খাঁনও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। অত্র এলাকায় শরীয়াতের আইন চালু করার ব্যাপারে এ সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জুমার নামাজের পর সকল খান, আমীর ও আলেমগণ সৈয়দ সাহেবের নিকট শরীয়তের বাইয়াত গ্রহন করেন। বাইয়াত গ্রহনের সময় লিখিত শপথ নামা পাঠ করানো হয়। শপথ নামায় ছিলঃ ১) শরীয়তের বিধি-বিধান মেনে চলার প্রতিশ্র“তিতে স্বেচ্ছায় সৈয়দ সাহেবকে ইমাম মনোনিত করে তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলাম। ২) এ এলাকার শরীয়ত বিরোধী কাজ বন্ধ করে শরীয়তের হুকুম প্রতিষ্ঠা করবো। ৩) ইমাম মনোনিত করার পর তার বিরোধিতা করা সাংঘাতিক অপরাধ। বিরোধিতার সীমা অতিক্রম করলে তার মোকাবেলায় অস্ত্র ধারন সকল মুসলমানের উপর ফরজ। ৪) ইতোপূর্বেও আমরা বাইয়াত গ্রহণ করেছি। আজ আলেমদের সম্মুখে নতুন করে বাইয়াত গ্রহণ করলাম। সৈয়দ সাহেব আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আমাদের মরা-বাঁচা শুধুমাত্র ইসলামের জন্য হয়। এই ঐতিহাসিক বাইয়াতের পর সীমান্তের বিরাট এলাকায় ইসলামী শরীয়াত চালু হয়। ক্ষুদ্র একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ আহম্দ ব্রেলভী (রহঃ)। শরীয়াতের বিধান চালু হবার পর পুরো এলাকায় শান্তি স্থাপিত হলো। একের উপর অপরের জুলুম বন্ধ হলো। জুলুম করে পলায়নের পথ বন্ধ হলো। কাজী নিযুক্ত করে বিচার ফায়সালা শুরু হলো। উৎপাদিত ফসলের একদশমাংশ (ওশর) আদায়ের ব্যবস্থা করা হলো। খারায ও যাকাত আদায় এবং বন্টনের জন্য ব্যবস্থা গৃহীত হলো। এই ভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও এই উপমহাদেশের এক কোনে একটি ক্ষুদ্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঃ এবার একটা বিরাট বাহিনী গঠন করে প্রথমে শিখদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং সশন্ত্র জিহাদ ঘোষনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে স্থানীয় সর্দার-মোল্লাদের সন্দেহ প্রবনতা, স্বার্থপরতা এবং অন্যায় পক্ষপাতিত্বের ফলে এই আশার আলো দেখতে দেখতেই নিভে গেল। তিন চার বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর যে ঈপ্সীত চরম লক্ষ্যে পৌঁছার পথ উন্মুক্ত হয়ে এসেছিল, তা বরবাদ হয়ে গেল। অত্র এলাকায় সৈয়দ সাহেবের আগমনের পূর্বে স্থানীয় মোল্লাগণ জনসাধারনের নিকট থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে সেটাকেই নিজেদের আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবহার করতো। সৈয়দ সাহেবের আগমনের পর ‘‘ওশর’’ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে মোল্লাদেরকে চাঁদা দেয়ার নিয়ম বাতিল হয়ে গেল। এ কারণে তারা ভিতরে ভিতরে নিজেদের স্বার্থে সৈয়দ সাহেবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত হবার পর স্থানীয় সরদারদেরও বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। পাঠানদের শ্রেষ্ঠ অধিপতি মুজাহিদ বাহিনী বিরোধী চক্রান্তের প্রধান হোতা ইয়ার মোহাম্মদ খাঁন ১২৪৫ হিজরীর ১৫ই রবিউল আউয়াল ১৮২৯ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর জায়েদার যুদ্ধে নিহত হয়। সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) কে বিষ প্রয়োগকারী এ দূররানী নেতা বারো হাজার সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন। হাজার খানেক ঘোড়া ও কিছু গণীমতের মাল ফেলে যায়। গণীমতের মালের মধ্যে কিছু কাগজ পাওয়া যায় যা পাঠে শিখ রাজা রণজিৎ সিং ও ফরাসী জেনারেল ওয়ানতুরা কর্তৃক সৈয়দ সাহেব (রঃ) এর পক্ষ থেকে পেশওয়ার ছিনিয়ে নেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে পড়ে । এখানে উল্লেখ্য যে, এ জেনারেল ওয়াতুনরা বা ভেন্তুরা ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন ইংরেজ সরকারের একজন সামরিক কর্মকর্তা। মোল্লা এবং সর্দারদের ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত একই সূত্রে মিলিত হয়ে সম্মিলিতভাবে যোগাযোগ করে এবং চিঠিপত্র দিয়ে ক্রমে ক্রমে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হলো। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্নভাবে অবস্থানরত গাজীদেরকে একই সাথে হত্যা করার চক্রান্ত হলো। ইংরেজ ও শিখদের সাথে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করা হলো। সৈয়দ সাহেবকে ইংরেজদের ‘চর’ হিসাবে কাজ কারার জন্য সীমান্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে বলে প্রচার করা হলো। প্রমাণ স্বরূপ ইংরেজদরে পক্ষ থেকে একটি ভুয়া চিঠি সীমান্তের সর্দারদের হাতে পৌঁছানো হলো। এই চিঠির ভিত্তিতে মোল্লারা জনসাধারনের নিকট প্রচার করলো যে, সৈয়দ সাহেবের সমর্থন করাতো দূরের কথা, তাঁর বিরোধিতা করাই হচ্ছে ইসলামের বড় খেদমত। এরকম একটি চিঠি সৈয়দ সাহেব (রাহঃ) এর হস্তগত হলে তিনি অন্যতম পাঠান সর্দার সুলতান মোহাম্মদ খাঁনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সুলতান মোহাম্মদ খাঁন এই চিঠির প্রেক্ষিতে নিজের দোষ স্বীকার করেন ও ক্ষমা প্রার্থনা চান। এ সময়ে সৈয়দ সাহেব (রাঃ) সুলতান মোহাম্মদ খাঁনকে ক্ষমা করে পেশওয়ারের কর্তৃত্ত্ব অর্পণ করেন। যদিওবা বিশ্বাসঘাতক এই দুররানী নেতাকে পেশওয়ারের শাসনভার প্রদান অনেক পাঠান সরদার এবং সৈয়দ সাহেব (রাঃ)’র ভক্তদের অনেকে সহজ ভাবে গ্রহন করতে পারেননি। কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ খাঁনের ক্ষমা প্রার্থনা যে শুধু প্রহসন মূলক ছিল তা পরের ঘটনাপঞ্জিতে সহজে ভেসে উঠে। সৈয়দ সাহেব পাঠান সর্দার ও কায়েমী স্বার্থবাদী মোল্লাদের বিভৎস বেঈমানীর ও নিষ্ঠুর কান্ডে বিশেষভাবে মর্মাহত হন। শিখ ও ইংরেজগণ এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ইসলামী আন্দোলনের পৃষ্টে কুঠারাঘাত করার সিদ্ধান্ত নিল। সৈয়দ সাহেব ও তাঁর সাথীগণ এ ব্যাপারে পূর্বাভাষ পেয়েও পরিস্থিতির বাস্তবতার আঁচ করতে পারেননি। ফলশ্র“তিতে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থানরত গাজীদেরকে এই বিশ্বাসঘাতকের দল নির্মমভাবে হত্যা করে। কাউকে ঘুমের মধ্যে, কাউকে নামায পড়া অবস্থায়, কাউকে পথ চলতে, কাউকে গল্পের আসরে হত্যা করা হয়। লুট করা হয় বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত ইসলামী রাষ্ট্রের খাদ্য গুদাম সমূহ। তিনি পেশওয়ারের সমস্ত খাঁন, সরদার, ওলামাদের ডেকে মহাষড়যন্ত্রমূলক ভাবে এসব গাজী- মোজাহিদদের শহীদ করার ব্যাখ্যা চান। তখন এসব বিদ্রোহী ও বেঈমানদের পক্ষ থেকে উত্তর আসে যে, সুলতান মোহাম্মদ খাঁন কর্তৃক প্রদর্শিত ভারত থেকে প্রেরিত উস্কানীমূলক চিঠির হুবহু নকলই এ হত্যা কান্ডের জন্য দায়ী। তখন সৈয়দ সাহেব (রহঃ) অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে শুক্রবার বাদে জুমা ওয়াজের মাধ্যমে ঊনার সংস্কারমূলক ত্বরীকায়ে মোহাম্মদীয়া ও মোহাম্মদী আন্দোলনের ব্যাখ্যা প্রদান করেন এবং চিরতরে পেশওয়ারের ত্যাগের সংকল্প ব্যক্ত করেন। তখন বিশ্বাসী আলেম ওলামা ও খাঁনদের চোখ অশ্র“সজল ছিল। উনি অবশিষ্ট গাজী ও মোজাহীদ নিয়ে আল্লাহর রাহে বের হয়ে পড়েন। রেখে আসেন চার বছরের জেহাদী স্মৃতি ও প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের অবশিষ্ট রেশ, তাঁর সংস্কার ও সিলসিলার প্রবাহমান আবহ। এই করুন পরিস্থিতির জিহাদের কেন্দ্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হলো এবং সৈয়দ সাহেব ঘোষনা করলেন, ‘‘যারা নিহত হয়েছেন তাঁরা সবাই শহীদ। আমি আমার জীবন আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে রেখেছি। সামনে আরো অধিক বিপদ মুসিবত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সেদিকেই অগ্রসর হতে যাচ্ছি। যাঁরা এই অনাগত বিপদ মুুসিবতকে ভয় পান, তারা যেন নিজ নিজ বাড়ীতে ফিরে যান।’’ গাজীগণ একথা শুনে সকলেই কাঁদতে লাগলেন। প্রিয় ইমামকে জিহাদের ময়দানে একা ছেড়ে যেতে কেউ রাজী হলেন না। এরপর সৈয়দ সাহেব নিজের স্ত্রীদ্বয়কে অছিয়ত করেন, ‘‘আমার জীবন যদি এই এবাদতেই শেষ হয়ে যায়, তবে তোমরা অন্য কোথাও বসতি স্থাপন না করে মক্কা অথবা মদীনা শরীফে চলে যাবে। কেননা এই ফেতনা-ফাসাদের যুগে এ ছাড়া অন্য কোথাও ঈমান বাঁচিয়ে রাখা দায়। কষ্ট হলেও সেখানে বসত করা শ্রেয়।’’ দ্বিতীয় হিজরতের পূর্বে শেষবারের মত সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী (রহঃ) পাঞ্জতারের লোকদের ডেকে কয়েকটি উপদেশ দিলেন। ‘‘ফতেহ খান তোমাদের নেতা, তাঁকে ওশর দিবে। শরীয়তের নির্দেশ মেনে চলবে। ভারত থেকে আগত মুজাহিদদেরকে যতœ করবে এবং নিরাপদে আমার নিকট পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে।’’ এরপর সৈয়দ আহমদ জিহাদের নতুন কেন্দ্রের সন্ধানে চার বছরের ক্ষুদ্র ইসলামী রাষ্ট্র পরিত্যাগ করে হিজরত পর কাফেলা নদী অতিক্রম করে। রাউজদেউরী পৌঁছলে চারিদিকে প্রচার হয়ে যায় যে, সৈয়দ সাহেব কাশ্মীর আক্রমন করার জন্য আগ্রসর হচ্ছেন। অবশ্য এর পিছনে কারনও ছিল। সৈয়দ সাহেব রাজদেউরী পৌঁছতে পৌঁছতে মুজহিদদের আগ্রগামী দল ভোগরমঙ্গল এবং বালাকোট ছাড়া কাশ্মীরের নিকটবর্তী শহর মুযাফফরাবাদে গিয়ে পৌঁছেছিলেন। পরিস্কার মনে হচ্ছে যে, তারা কাশ্মীরে প্রবেশ করেবেন। এই সংবাদ পেয়ে রনজিৎ সিংহ তার পুত্র হরি সিংহকে সেনাপতি করে বিরাট বাহিনী সাথে নিয়ে হাযারা প্রেরণ করে। শ্যামা সিংহ এবং জাওয়াল সিংহকেও সাথে পাঠানো হলো। এরা সকলেই ছিল শিখ দরবারের অন্যতম সদস্য। যে কোনভাবেই হোক, সৈয়দ সাহেবকে কাশ্মীর প্রবেশে বাধা দেয়াই ছিল এদের প্রধান দায়িত্ব। শের সিংহ তার বাহিনী নিয়ে শানাকিয়ারী পৌঁছালো। মুজাহিদ বাহিনীর সুদৃঢ় অবস্থানের কারনে অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী শানাকিয়ার দূর্গ থেকে শিখ সৈন্যরা বের হবার সাহস পায়নি। বালাকোট যুদ্ধ ও ইমাম সাহেবের শাহাদাত ঃ ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দে কাগান ও কাশ্মীরের কয়েকজন মুসলমান সর্দার শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। পরে এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য তাঁরা সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর নিকট আবেদন জানান। মুসলমান ভাইদের সাহায্যের ডাকে সাড়া দিয়ে সৈয়দ সাহেব মুজাহিদ বাহিনীকে তৈরী হবার নির্দেশ দেন। সোজা পথে প্রতিবন্ধকতা থাকায় সৈয়দ সাহেব তাঁর বাহিনী নিয়ে এক দুর্গম পথে কাশ্মীর রওনা হন। এদিকে মুজাহিদ বাহিনীর অগ্রসর হবার সংবাদ পূর্বেই শিখ ছাউনীতে পৌঁছে গিয়েছিল। এতদঞ্চলের শিখ বাহিনীর সেনাপতি ছিল শের সিংহ। শিখ শিবিরে শিখ সৈন্যদের সংখ্যা মুজাহিদ বাহিনীর চেয়ে বহুগুনে বেশী ছিল। ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দে মে মাসের ৬ তারিখে সূর্যোদয় হলো। মাটিকোটের উত্তর দিকে শিখ সৈন্যদের অগ্রযাত্রা দেখা দিল। তাদের গতি বালাকোটের দিকে। ক্রমেই শিখদের সংখ্যা বৃদ্ধিপেতে থাকে। লক্ষাধিক মুজাহিদ বাহিনী থেকে খসে যেতে যেতে এ ক্ষুদ্র আল্লাহর পথে প্রাণদানকারী গাজী ও মুজাহিদ বাহিনীকে ঠেলে দিল ইংরেজ বেনিয়া শক্তি ও বিশ্বাসঘাতক পাঠান সরদার, খাঁন, অর্থলোভী স্থানীয় মোল্লারা ভারতের সবচেয়ে মুসলিম বিদ্বেষী শিখ জাতির এক বিরাট বাহিনীর মুখে। বালাকোট থেকে শহীদ হওয়ার মাত্র এগারদিন পূর্বে প্রেরিত একটি চিঠিতে নওয়াব ওয়াজিরুদ্দৌল্লাকে লিখিত তথ্যে এসব চক্রান্তের কথা ফাঁস হয়ে যায়। অথচ পেশওয়ার গমনের সময়ে উক্ত আদি জাতির শ্রদ্ধা এতই নিরংকুশ ছিল যে, তারা তাঁর ঘোড়ার পায়ে চুমু খায়। মুজাহিদ শিবিরে এবং পার্শ্ববর্তী মুসলিম জনবসতিতে শিখদের বন্দুকের গুলি এসে পৌঁছাতে লাগলো। এ পরিস্থিতিতে খুব ভোরে ভোরে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবার নির্দেশ এলো। তাছাড়া শক্রর ভয়ে সরে যাওয়া ইসলাম কখনো অনুমোদন করে না। আল্লাহর ইচ্ছা এই বালাকোটেই বাস্তবে পরিনত হবে। সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী নিজেই আজকের যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট ছোট গ্র“প কমান্ডারদের প্রতিও নির্দেশ এলো- সমবেত আক্রমন করা হবে। সকলেই নিজ নিজ ব্যুহের মধ্যে থেকেই গুলী চালাবে। যেহেতু শক্রু সংখ্যা বেশী। সেহেতু বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নয়, সম্মিলিত ভাবেই আক্রমন করলেই সুবিধা হবে। শিখ সৈন্যরা ক্রমে ক্রমে মুজাহিদ বাহিনীর দিকে স্রোতধারার মত অগ্রসর হতে থাকে। শিখ সৈন্যরা খুব কাছাকাছি পৌঁছালে ইমাম সাহেব তকবীর ধ্বনি করে আক্রমন করলেন এবং সকলকে আক্রমনের নির্দেশ দিলেন। মুজাহিদ বাহিনীর প্রথম আক্রমন সহ্য করতে না পেরে শিখ বাহিনী পশ্চাদপসরন করতঃ পাহাড়ের উপর আরোহন করতে থাকে। মুজাহিদ বাহিনীর তাদের পিছু ধাওয়া করতে করতে পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উপস্থিত হয়। শিখ সেনাপতির উৎসাহে শিখ বাহিনী আবার সামনে অগ্রসর হতে শুরু করে। ইমাম সাহেব পুনরায় বিদ্যুতবেগে শত্র“র উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। শক্রদের কেই অস্ত্র ধারন করলো, কেউ পলায়ন করলো। কিন্তু কোথায় পালাবে? তারা পাহাড় থেকে স্রোতের বেগে নামছিল, অথচ দৌঁড়ে পাহাড়ে উঠতে পারছিল না। যারা নিচে নেমে গিয়েছিল, তাদের প্রায় সকলেই নিহত হল। উপর থেকে শিখ সৈন্যরা গুলি করছিল, বৃষ্টির মত গুলি। উভয় পক্ষে পাথর বিনিময়ও চলছে। অবশেষে অসংখ্য শিখ সৈন্য স্রোতের মত মুজাহিদ বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে প্রচন্ড যুদ্ধ, হাতাহাতি এবং মল্ল যুদ্ধ শুরু হয়। এক একজন মুজাহিদ কোন কোন বর্ননা মতে ১০০ জন শিখ সৈন্যের সাথে মোকাবেলা করতে করতে শাহাদত বরণ করেন। এক পর্যায়ে দুপুর ১১টা কি ১২টা দিকে গুলির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মটিকোটের খালের তীরে সৈয়দ সাহেব মানে সকলের ইমাম শাহাদাত বরণ করেন। দিনটি ছিল ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দের ৬ই মে, রোজ জুমাবার, ১২৪৬ হিজরীর ২০শে জিলকদ। এই যুদ্ধের পরও প্রায় তিনশত মুজাহিদ জীবিত ছিলেন। শিখ সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করলে মুসলিম অধিবাসীগণ মুজাহিদদের লাশ দাফন করেন। বালাকোটে দুনিয়া কাঁপানো এ সংস্কারক তথা মোজাদ্দেদ একশ ছয়ত্রিশ থেকে একশ চুয়াল্লিশ জন মোজাহিদ নিয়ে শাহাদত বরন করেন। তিনি বালাকোটে’র পরে রেখে গেলেন উনার প্রচারিত মোহাম্মদীয়া আন্দোলনের কিছু গাজীকে ও উনার সংস্কারের সংবিধানকে। তাঁর হাতে গড়া চল্লিশ লাখের অধিক বিধর্মী মুসলমান ও ত্রিশ লাখের অধিক সিলসিলাপন্থী মুসলমানকে। বলা প্রয়োজন যে, এ বালাকোটের ময়দানেই বাংলার বীর গাজী সূফী নুর মোহাম্মদ নেজামপুরীকে খেলাফত প্রদান করেন। এতদ সত্তেও এক শ্রেণীর আলেম নামধারী হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রহঃ) এবং তাঁর মোহম্মদী আন্দোলন সম্পর্কে এমন সব কথা বলে বেড়ান যা ইংরেজদের তল্পিবাহক লেখকদেরও হার মানায়। এ প্রসঙ্গে প্রথমে হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রহঃ) ও তাঁর আন্দোলন সম্পর্কে উইলিয়াম হান্টারের অভিমত সমূহ সুপ্রিয় পাঠকদের সামনে পেশ করতে চাই, যাতে করে সচেতন পাঠকমহল উইলিয়াম হান্টারের সাথে তথাকথিত ফতোয়াবাজ ও আত্মভোলা মোল্লাদের সাযুজ্যতা সহজে খোঁজে নিতে পারেন। এক সময়ের কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইংরেজ সিভিলিয়ান উইলিয়াম উইলসন হান্টার তাঁর রচিত ‘‘দি ইন্ডিয়ান মুসলমান’’ গ্রন্থে তৎকালীন সর্বভারতীয় মুসলমানদের জেহাদ, চেতনাকে নানাভাবে চিত্রিত করে থাকলেও হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদের (রঃ) ও তাঁর অনুসারীদের কর্মকান্ডকেই বেশ কটাক্ষ ও বক্র দৃষ্টিতে নীচু স্থানে নিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। উচ্চ শিক্ষিত এই আমলা নিতান্ত মুন্সিয়ানা ভাষায় তার ভাব ও প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপস্থাপনা করেন। ফাঁকে ফাঁকে তৎকালীন মুসলমানদের অধিকার ও দাবী বৃটিশ রাজের কাছে উপস্থাপনার ভঙ্গিতে সাফাই গাওয়ার মাধ্যমে তার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছেন, যা সহজে প্রণিধানযোগ্য। এসব বর্ননার মধ্যে তার অজান্তেই তৎকালীন বৃটিশরাজের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের মানসিকতা, ধর্মভীরুতা, হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) ত্বরীকত, জেহাদ ইত্যাদির আসলত্ব ফুটে উঠেছে। এই গ্রন্থের প্রথম দিকে এক স্থানে হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) ও শিখদের সাথে বালাকোটে জিহাদ ছিল তৎকালীন ভারতীয় উলামাদের ফতোয়ারার মাধ্যমে বৈধ জিহাদ তা বর্ণনা করেছেন এবং ঐ জিহাদের জন্য তদানীন্তন ভারতীয় একজন আলেম কর্তৃক প্রচারিত জিহাদের ফতোয়ামূলক প্রচার পুস্তিকাকে কটাক্ষ করে যে বর্ণনা করেছেন তাও প্রণিধানযোগ্য। তিনি ঐ প্রচার পুস্তিকাকে তার বইতে ফতোয়া বলে উপস্থাপন করেছেন। এই ফতোয়ার সারমর্ম ছিল নিুরূপ ঃ শিখেরা লাহোরে ও অন্যান্য স্থানে বহুদিন ধরে হুকুমত চালাচ্ছে। তাদের সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। হাজার হাজার মুসলমানদের ললাটে লাঞ্চনা পুঞ্জিভূত হয়েছে। তাঁদের মসজিদে আযান দিতে দেয়া হচ্ছে না, গো- জবেহ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে যখন তাদের অত্যাচার ও অপমান সহ্যের সীমা অতিক্রম করলো তখন সৈয়দ আহমদ (তাঁর সৌভাগ্য ও প্রসংশা অক্ষয় হোক) একমাত্র দ্বীনের হেফাজত করতে কয়েকজন মাত্র সঙ্গী নিয়ে কাবুল ও পেশয়ারের দিকে রওয়ানা হলেন, মুসলমানদেরকে গোমরাহীর নিদ্রা থেকে জাগাতে সমর্থ হলেন। তিনি তাঁদেরকে তাদের কর্মক্ষেত্রে বীরের মত অগ্রসর হতে উদ্বুদ্ধ করলেন কয়েক হাজার ঈমানদার মুসলমান তাঁর আহবানে আল্লাহর রাহে জান দিতে প্রস্তুত হলেন সবই আল্লাহর মহিমা ইত্যাদি। এ বর্ণনার দ্বারা যে হান্টার নিতান্ত ফাঁক ফোকের কটাক্ষের মাধ্যমে তার বইয়ের আলোচনার মধ্যপথে বিরতী দিয়ে ঐ ফতোয়ার উপস্থাপন করলেও হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) এর বালাকোটের জেহাদ যে, তৎকালীন আলেমগণ কর্তৃক ফতোয়ার মাধ্যমে বৈধ জেহাদ ছিল তা সহজেই ভেসে উঠে। ঐ গ্রন্থের প্রথমার্ধে তিনি হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) কে দুস্য ইত্যাদি বলে কঠোরভাবে আক্রমন করেছেন। কিন্তু হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) এর চরিত্র বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, তিনি বেশীরভাগ সময়ে মৌনতা অবলম্বন করতেন ও ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ধ্যানে তিনি এতই মগ্ন হয়ে যেতেন যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় থাকে মৃগীরোগী বলে অভিহিত করা হয়। যদিও ইসলাম বিদ্বেষী, অবিশ্বাসী ও ধর্মের হাকিকত সম্পর্কে অনবহিত এই হান্টারের ভাষায় ধ্যানের এই উচ্চপর্যায়ের এই অবস্থাকে মৃগীরোগী হিসাবে অবহিত করা হয় কিন্তু ইসলামী তাছাউফ তথা হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) এর ত্বরীকতের পরিভাষায় এই ধ্যানকে মোরাকাবা ও এই মৃগীরোগ যে, তাছাউফের ভাষায় ‘‘অজদ’’ বা নুর ও তাজাল্লীর বেঁহুশী তথা জিকিরে জলি তা দিবালোকের মত সহজে পরিস্কার হয়ে যায়। এ ছাড়া হান্টার তার গ্রন্থে পূর্বাপর বোঝাতে চেয়েছেন যে, হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) ও তাঁর অনুসারীদের এই জিহাদ নিতান্ত ভাবে তাদের বিরুদ্ধে তথা ইংরেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তার লেখার ছত্রে ছত্রে তা এমনিতেই ফুটে উঠেছে। যেমন এক জায়গায় তিনি লিখেছেন ভারতীয় এই মুসলিম জাতি তাদের একটি অংশকে সর্বদা তাদের বিরুদ্ধে নিয়োজিত রেখেছে যারা প্রথমে লাহোরে রনজিৎ সিংয়ের বিরুদ্ধে ও পরে তাদের পিছনে লেগে থাকে। যার জন্য তাদের চরম মূল্যে দিতে হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ব্যয়বহুল যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছে। এখানে প্রসঙ্গত বলতে হয় যে, ১৮৫৭ সালের পূর্বে মোহাম্মদী মোজাহিদগণ ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে যে সব ইশতেহার প্রচার করে তার মধ্যে দু’টি বিষয় ছিল বেশী উল্লেখযোগ্য। একটি ছিল ধর্মীয় হস্তক্ষেপ ও দ্বিতীয় ছিল লাখেরাজের বাজেয়াপ্তি। এই ধর্মীয় হস্তক্ষেপ কয়েক প্রকারের ছিল। তাই এত কিছুর পরও এই ইংরেজ জাতির দৃষ্টি ছিল এখানে নয় অন্য জায়গায় অন্যখানে। এখানে একটি ব্যাপার এসে যায় যে, আমাদের বর্ণনায় প্রথমদিকে হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) এর পবিত্র হজ্ব পালন বর্ণনা প্রসঙ্গে হান্টার প্রমুখের তথ্যে উনি যে পবিত্র হজ্ব পালন কালে আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারীদের সংস্পর্শে আসেন এবং ভারতে এসে ওহাবী মতবাদ প্রচার করেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এর প্রেক্ষিতে হান্টার প্রমুখের অনুসরনে অনেক মুসলিম ঐতিহাসিক ও লেখক উর্দু-ফার্সী কিছু পুস্তক-পুস্তিকায় ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পাঠ্য পুস্তকে যে সব উক্তি পাওয়া যায় তার আলোচনার আগে আমাদেরকে তৎকালিন হেজাজ নজদ প্রবেশ সন্নিবেশিত আরব দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ও আব্দুল ওহাব নজদী এবং তার কর্মকান্ডের রাজনৈতিক পরিধি সন্ধানে যেতে হবে। যেমন তথাকথিত ওহাবী আন্দোলনের নেতা মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী জন্ম গ্রহন করেন ১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দে। নজদের উয়াইনা এলাকার তামিম গোত্রে। ১৭২০ খৃঃ হজ্ব পালন করতে গিয়ে তুর্কী সুলতান কর্তৃক হজ্ব কার্যের কিছু অংশে তার দৃষ্টিতে অনৈসলামিক প্রতিপাদ্য হওয়ায় সুলতানের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফলে তিনি তুর্কী সুলতান কর্তৃক বিতাড়িত হন। আদ্দরিয়ার শাসক মোহাম্মদ ইবনে সউদের আশ্রয় গ্রহণ করেন। মোহাম্মদ ইবনে সাউদের কন্যাকে বিবাহ করেন। তারা উভয়ে তুর্কী সালতানাতের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৭৪৭ সালে রিয়াদের শেখের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে। ১৭৮৭ সালে আবদুল ওহাব নজদীর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার ও মোহাম্মদ ইবনে সউদের সংগঠিত গহিনী ১৭৯১ সালের মধ্যে পূর্বে ভারত মহাসগর পারস্য মহাসাগর ও উত্তরে লোহিত সাগর পর্যন্ত তাদের ক্ষমতার পরিধিকে বিস্তার করে। এই সময়ে ১৮১১ সালে মিশরের সর্বশেষ তুর্কী সুলতান মোহাম্মদ আলী পাশা তাদের এই শক্তিকে ধ্বংস করেন। ১৮১১ সালে মদীনাও ১৮১২ সালে মক্কা পুনরায় দখল করে নেন। এর মধ্যে সময়ে ১৮১৮ সালে মোহাম্মদ ইবনে সউদের মৃত্যু হয়। এই শক্তি ও মতবাদ আবার অনেক দিন পরে ১৯০৪ সালে প্রথমে নজদে ক্ষমতাকে পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯২৪ ও ২৫ খৃঃ মক্কা ও মদীনা দখল করে। ১৮১২ থেকে ১৯২৪-২৫খৃঃ পর্যন্ত এই প্রায় এক শতাব্দি আরবে তথা মক্কা মদীনাতে আবদুল ওহাব নজদীর মতবাদের অনুসারীগণ ছিল একটি পরাজিত, বিধ্বস্ত ও পলাতক সম্প্রদায়। তাদের এসময়ে মক্কা মদীনা তথা আরবের কোন অঞ্চলে প্রকাশ্যে মতবাদ প্রচার করার কোন সুযোগ ছিল না। হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) এই সময়ে ১৮২২ সালে পবিত্র মক্কা ও মদীনা হজ্ব পালন করতে গমন করেছিলেন। কমবেশী দেড়বছর অবস্থান করেছিলেন। উপমহাদেশের হযরত সৈয়দ সাহেব (রাঃ) এর নির্ভরযোগ্য ও প্রামান্য জীবনী গন্থের মধ্যে “ওয়াকেয়ায়ে আহমদী” “মাখজানে আহমদী” “সীরাতে সৈয়দ আহমদ শহীদ” “মুনজুরাতুস সয়াদ” “ওয়াসায়া” ইত্যাদি গ্রন্থ সমূহে সৈয়দ সাহেব (রাঃ) পবিত্র হজ্ব পালন ও মক্কা মদীনায় অবস্থান সম্পর্কিত যে সব বর্ণনা পাওয়া তা এ ব্যাপারে প্রনিধানযোগ্য। এ সম্পর্কে বর্ণনা যে, হযরত সৈয়দ সাহেব (রাঃ) হজ্ব পালনকালে প্রথমে মক্কার বিখ্যাত হানাফী মোহাদ্দেছ বুজুর্গ আলেম শেখ ওমর বিন আবদেরাসুল (রঃ)’র সাথে মোলাকত করেন। এই শেখ ওমর (রঃ) এতই উচ্চ মর্যাদার আলী ও জাহেদ ছিলেন যে, তিনি তৎকালীন তুর্কী সুলতান প্রদত্ত হাদিয়াও কোনদিন গ্রহণ করেননি। কিন্তু সে সময়ে তিন হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) এর দেয়া পাঁচ রিয়াল হাদিয়া গ্রহণ করেছিলেন। এই ঘটনা দেখে উপস্থিত মক্কাবাসী হাজীরাও আশ্চর্য হয়ে যায়। এ সময় সেখানে তিনি তার ত্বরীকতের প্রচারে ব্যস্ত থাকেন বিভিন্ন হাজীদের কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করেন। এছাড়া উনার হাতে তৎকালীন খানায়ে কাবার হানাফী মুছাল্লার ইমাম শেখ মোস্তফা, খাজা আগা আলমাছ হিন্দী, খাজা ছেরা সামশুদ্দিন আতাও সে সময়ের ক্ষমতাসীন মিশরীয় ছুন্নী তুর্কী সুলতানের প্রতিনিধি (নায়েব) শেখ হাসান আপেন্ধী প্রমুখ মজহাবের বড় বড় ইমাম ওলামা, বুজুর্গ ও সুধীবৃন্দ বায়াত হন। এই সময়টুকুতে যে সব মজহাবের ইমাম, মোহাদ্দেছ, মুফতি, বুজুর্গ ও ওলামাদের কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করেন ও মোলাকাত করেছিলেন তারা সকলে ছিল নিঃসন্দেহে হানাফী ছুন্নী আক্বিদার অনুসারী। এছাড়া সে সমেয় ক্ষমতাসীন সরকার ছিল তুর্কীর ছুন্নী মুসলমান ও আবদুল ওহাব নজদী তার অনুসারীদের মক্কা ও মদীনা শরীফ থেকে উৎখাতকারী। যেখানে সে সময়ে প্রতিষ্ঠিত সরকার ছিল তুর্কী-ছুন্নী ও নজদী মতবাদের ঘোর বিরোধী ও নিপাতকারী, সুতরাং সে সময়ে কোন নজদী মতবাদের অনুসারীদের জনসমক্ষে তাদের মতবাদ প্রচার করা ও অপরজনকে দীক্ষিত করার কোন অবকাশ ছিল না, পক্ষান্তরে হযরত সৈয়দ সাহেব (রাঃ) তখন নজদী বিরোধী তুর্কী সরকারের সহযোগিতা লাভ করেন। হান্টারের তথ্যে উনাকে তৎকালীন সরকার কর্তৃক মক্কা শরীফ থেকে বহিস্কার করা ইত্যাদি এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। এখানে বুঝা যায় যে, হান্টার প্রমুখের অনুসরনে কিছু মুসলমান ঐতিহাসিকের প্রচলিত পাঠ্য পুস্তক ভিত্তিক তথ্যে হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) এর হজ্বে থাকাকালে ওহাবী মতবাদের সংস্পর্শে আসা ও ভারতে ফিরে এসে ঐ মতবাদ প্রচার করা সম্পর্কিত লেখাগুলো বাস্তবতা বিরোধী, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ত্বরীকায়ে মোহাম্মদীয়া ও মোহাম্মদী আন্দোলনকে ওহাবী ইজম তখা ওহাবী মতবাদ, ওহাবী আন্দোলন বলে প্রচার এবং এসব বর্ণনা বা তথ্যে “ওহাবী” শব্দ প্রয়োগ ছিল সে সময়ে ভারতীয় বৃটিশ কর্তৃপক্ষ ও তার দোসর হিন্দু, শিয়া ও শিখ শক্তির দ্বারা নিছক বিবাদের উদ্দেশ্যে, ঈর্ষাকৃতভাবে ও স্বেচ্ছাচারী হিসেবে। সে সময়ে এ দেশের সাধারণ সুন্নী আক্বিদায় বিশ্বাসী ও ত্বরীকত পন্থী মুসলমানগণ কথিত আবদুল ওহাব নজদী ও তার মতবাদ আক্বিদাকে সহজে গ্রহণ করত না ও নিতান্ত হেয় চোখে দেখত। এ সুযোগে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের বুদ্ধিজীবী ও আমলারা হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) এর পরিচালিত মোহাম্মদী আন্দোলনকে ওহাবী আন্দোলন বলে প্রচার ও এদেশের সাধারণ মুসলমানদের কাছে অপ্রিয় করা ও ক্ষেপিয়ে তোলা এবং সে সুযোগে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য “ওহাবী” শব্দকে উপযুক্ত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) এর জিহাদ ইত্যাদি ছিল নিতান্তভাবে ইংরেজ ও শিখ শক্তির বিরুদ্ধে। এর আড়ালে ত্বরীকতের প্রচার ও শরীয়াতের সংস্কার ও একান্তভাবে জিহাদ ফি ছাবিল্লিাহর মাধ্যমে ভারতীয় জনজীবনে খাঁটি দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা। উনার সে জিহাদ নিছক ক্ষমতার মোহে কোন মুসলমানের রক্তে তলোয়ার রঞ্জিত করার জন্য ছিলনা। যেমন হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) জেহাদের জন্য দিল্লী থেকে বের হয়ে বালাকোটে শহীদ হওয়া পর্যন্ত মধ্য পথে কতগুলি মুসলিম পাঠান উপশক্তি যেমনঃ ইয়াব মোহাম্মদ খান, খাদী খান ইত্যাদির সাথে যুদ্ধ ও রক্ত পাত করাতে প্রশ্ন জাগতে পারে তারা তো ছিল মুসলমান? উত্তর অতি সহজ। এরা মুসলিম হলেও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বৈধ ও অপরিহার্য ছিল, কারণ ওরা ইসলামী রাষ্টের সরকার ও বৈধ ইমামের সাথে বিদ্রোহকারী মোরতাদ ও মুসলিম বিরোধী শিখ শক্তির ও ইংরেজ শক্তির সাথে আঁতাতকারী মোনাফেক। পরিশেষে আমি আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রজা খান ব্রেলভী (রহঃ) এর নগন্য অনুসারী হওয়ার সুবাদে সুন্নি ভাইদের উদ্দেশ্যে একটি মাসআলার ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। ইমাম আহমদ রজা খানের সংকলন ‘‘মালফুজাত’’ এর প্রথম খন্ডের একশ’ দশ পৃষ্ঠাতে এক প্রশ্নোত্তরে তেরোশ হিজরীর মুজাদ্দিদ ও মোহাম্মদী আন্দোলনের সার্থক পরিচালক হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) কে কাফের হিসেবে মন্তব্য করা হয়েছে এবং আরো বলা হয়েছে যে হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) কে যাঁরা কাফের হিসাবে মেনে নিতে সন্দেহ করেন তাঁরাও কাফের। এই মালফুজাতটি কতটুকু সঠিক তা অনুধাবনের জন্য কুতুবুল এরশাদ হযরত সৈয়দ হাফেজ মুনির উদ্দিন (রহঃ) ৫-১২-১৯৩২ ইং সনে চট্টগ্রামের দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা আবদুল আউয়াল ছাহেব (রাহঃ) কে দিয়ে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বিশেষ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালার উপর আলোকপাত করে একটি উর্দূ পুস্তিকা লিখিয়েছিলেন, পাঠকদেরকে সেই উর্দু পু¯িতকাটি পাঠ করার অনুরোধ জানাই। উক্ত পুস্তিকাটির নাম ছিল আ’জামুল ফতোয়া’’ । ঐ পুস্তিকাটির একটি জায়গায় বড়পীর হযরত শাহ আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ) পর্যন্ত বেলায়েত সমাপ্ত কিনা এক প্রশ্নোত্তরের জওয়াবে হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (রঃ) কে অলি হিসাবে বর্ণনা করা হয়। তাঁর বেলায়েতে কোন সন্দেহ নেই বলে ফতোয়া প্রদান করা হয়। ঐ পুস্তিকাটিতে ঐ মতামতের স্বপক্ষে সে সময়ের চট্টগ্রামের আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামাতের যে সমস্ত বুজুর্গ ওলামা, পীরে ত্বরীকত ও মোহাদ্দেছিনে কেরাম দস্তখত করেছিলেন তাঁরা হলেন যথাক্রমে ঃ ১) পীরে ত্বরীকত সুলতানুল কামেলীন হযরত মাওলানা আবদুল হামিদ বাগদাদী (রহঃ) ২) চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়ার মুহাদ্দিছ পীরে কামেল হযরত মাওলানা ছফিরুর রহমান হাশেমী (রহঃ) ৩) কলিকাতা আলীয়া ও চট্টগ্রাম মোহসেনীয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা আবদুল হামিদ ফখরে বাংলা (রহঃ) ৪) আল্লামা গাজী শেরে বাংলা হযরত আজিজুল হক আলকাদেরী (রহঃ) ৫) পীরে তরিকত গারাঙ্গীয়ার হযরত শাহ মওলানা আবদুল মজিদ (রহঃ) ৬) চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দীস হযরত মাওলানা মীর মাছউদ আলী (রহঃ) ৭) হযরত মাওলানা সূফী আহসান উল্লাহ সাহেব (রহঃ) ৮) পীরে তরীকত হযরত মাওলানা সৈয়দ আবদুল করিম মাদানী (রহঃ) ৯) হযরত মাওলানা তকি সাহেব (রহঃ) ১০) হযরত মাওলানা এরশাদ আলী সাহেব (রহঃ) ১১) হযরত মাওলানা বদিউর রহমান সাহেব (রহঃ) ১২) হযরত হাফেজ সৈয়দ মুনির উদ্দিন সাহেব রহঃ) ১৩) হযরত মাওলানা ফয়েজুল করিম (রহঃ) ১৪) চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার মোহাদ্দীস মাওলানা আফাজ উল্লাহ (রহঃ) ১৫) চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দীস চুনতি নিবাসী হযরত শাহ মাওলানা নজীর আহমদ (রহঃ) এবং হযরত মাওলানা আবদুল আওয়াল সাহেব (রহঃ) যিনি এই ফতোয়া ও পুস্তিকা ‘‘ আজামুল ফতোয়ার লেখক’। আরব, আজম, হিন্দুস্তান ও বাংলায় জাহেরী বাতেনী কামালতে পূর্ণ বড় বড় আলেমগণ যাঁদের দ্বারা শিরক, বিদয়াত দূরীভূত হয়েছে। তাঁরা উক্ত সাইয়িদ সাহেবের মুরিদ ছিলেন। তাঁরা সকলেই মজহাব অবলম্বনকারী ছিলেন। হযরত সৈয়দ সাহেব (রঃ) হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ মোহাদ্দেদ দেহলভী (রহঃ)’র খাছ মুরিদ ছিলেন। যে ব্যক্তি এই রূপ তরিকত ও শরীয়াতের হাদী, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামের বংশধর ও কামেল মোর্শেদের উপর অযথা অপবাদ প্রয়োগ করে সে ব্যক্তি গুনাগার, বদকার, মিথ্যাবাদী ও অপবাদকারী ব্যতীত আর কিছুই নয়। যে ব্যক্তি এই ধ্র“ব সত্যকে অস্বীকার করে সে ব্যক্তি ভ্রান্ত, সত্য পথ ভ্রষ্ট। লেখক কাযী মুহাম্মদ আবুল বয়ান এম.আর. রহমান হাশেমী অধ্যক্ষ - আহছানুল উলুম জামিয়া গাউছিয়া কামিল (বিশ্ববিদ্যালয়) মাদরাসা কুলগাঁও, জালালাবাদ, বায়েজিদ বোস্তামী, চট্টগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন