রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৫

শাফাআত

মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান

হাশরের মাঠে গোনাহগারদের জন্য রাসূল (সা.) ও নেক্কার উম্মতগণের শাফাআত হাদীসে মাশহুর দ্বারা প্রমাণিত। খারেজী, মুতাযিলাসহ কিছু ভ্রান্ত দল শাফাআতকে অস্বীকার করেন। খারেজীদের বক্তব্য হলো কবীরা গোনাহকারী কাফির। আর কাফিরদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। মু’তাযিলারা শাফা’আতকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। তাদের দৃষ্টিতে শাফাআত হলো নেক্কারদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য। শাফাআতের মাধ্যমে গুনাহগারদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া অসম্ভব। বর্তমানে নব্য কিছু দল মুতলাকান গোনাহগারদের জন্য রাসূল (সা.)-এর শাফাআতকে অস্বীকার করেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদা হলো কিয়ামতের দিন রাসূল (সা.) সহ অন্যান্য নেক্কারগণ এমন গুনাহগার উম্মতের জন্য শাফাআত করবেন, যাদের উপর জাহান্নাম অবধারিত। সুনানে ইবনে মাজাহ-তে হযরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন- কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোক শাফা‘আত করবেন। নবীগণ, আলিমগণ এবং শহীদগণ।
শাফাআতের সর্বোচ্চ স্তর হলো শাফাআতে কুবরা। এটি রাসূল (সা.)-এর জন্য নির্দিষ্ঠ। কিয়ামতের ভয়াল মাঠের ভিষন কষ্ঠ থেকে সমস্ত মাখলূককে মুক্তি দিয়ে বিচারকার্য শুরু করার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে রাসূল (সা.) সুপারিশ করবেন। এই শাফাআত সম্পর্কে বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন- যখন কিয়ামতের দিন লোকেরা সমুদ্রের ঢেউ-এর মতো পেরেশান হয়ে যাবে তখন তারা আদম (আ.)-এর কাছে আসবে এবং বলবে, আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য শাফাআত করুন। তিনি বলবেন আমি এর উপযুক্ত নই, তোমরা ইবরাহীম (আ.)-এর কাছে যাও; তিনি আল্লাহর খলীল। এরপর সবাই ইবরাহীস (আ.)-এর কাছে এসে শাফাআতের জন্য আরজ করবে। তিনি বলবেন আমি এর উপযুক্ত নই, তোমরা মূসা (আ.)-এর কাছে যাও। কেননা তিনি কালীমুল্লাহ। এরপর লোকের তার কাছে আসবে এবং শাফাআতের আবেদন করবে। তিনি বলবেন- আমি এর উপযুক্ত নই। তোমরা ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও, কেননা তিনি রূহুল্লাহ ও কালিমাতুল্লাহ। এরপর লোকেরা ঈসা (আ.)-এর কাছে আসবে এবং শাফাআতের আরজ করবে। তিনিও বলবেন আমি এর উপযুক্ত নই, তোমরা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট যাও। 
এরপর সবাই আমার নিকট আসবে এবং মহান আল্লাহর কাছে শাফাআতের জন্য বলবে। আমি বলব হ্যাঁ! আমি এই কাজের উপযুক্ত। অতপর আমি আমার রবের দরবারে অনুমতি চাইব, আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। এরপর আমার অন্তরে কিছু প্রশংসামূলক শব্দ তৈরী  করে দেওয়া হবে যার মাধ্যমে আমি আমার রবের প্রশংসা করব। তারপর আমি মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় অবনত হব। এরপর আমাকে বলা হবে-
 يا محمد! ارفع رأسك وقل يسمع لك وسل تعط واشفع تشفع، فأقول رب أمتي أمتي
হে মুহাম্মদ (সা.)! আপনার মাথা তুলুন। আপনি বলুন আপনার কথা শুনা হবে, আপনি চান আপনাকে প্রদান করা হবে, আপনি শাফাআত করুন আপনার শাফাআত কবূল করা হবে। তখন আমি বলব- হে আমার রব! আমার উম্মত, আমার উম্মত।
বুখারী শরীফে অপর হাদীসে রাসূল (সা.)-এর এই বিশেষ সম্মানকে “মাকামে মাহমূদ” বলা হয়েছে।
এই শাফাআত আমাদের নবীর জন্য খাস বা নির্দিষ্ঠ। 

রাসূল (সা.) কিয়ামতের দিন তার উম্মতের মধ্যে যারা জাহান্নামী তাদের মুক্তির জন্য শাফাআত করবেন। ইবনে মাজাহ ও মুসনদে আহমদে হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত আছে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- আমাকে শাফাআত এবং আমর অর্ধেক উম্মতকে (বিনা হিনাবে) বেহেশতে প্রবেশ করানোর ব্যপারে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। আমি শাফাআত করাকে গ্রহণ করেছি, কেননা এটা অধিক ব্যাপত এবং যথেষ্ট হবে। তোমরা মনে করো না শাফাআত শুধুমাত্র মুত্তাকীদের জন্য। বরং ইহা গুনাহগার, পাপী ও অপরাধীদের জন্য।
তিরমিযী শরীফে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে-
قال رسول الله صلي الله عليه وسلم شفاعتي لأهل الكبائر من أمتي
আমার উম্মতের মধ্যে কবীরা গুনাহকারীদের জন্য আমার শাফাআত।
মুসনাদে আহমাদে হযরত আবূ দারদা (রাদ্বি.) হতেও অনুরূপ বর্ণনা আছ্।ে

অন্যান্য নবীগণের শাফাআত
ইবনে মাজাহ ও বায়হাকীতে হযরত জাবির (রাদ্বি.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- যখন জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মধ্যে পার্থক্য করা হবে তখন জান্নাতীরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রকেশ করবে। এরপর রাসূলগণ দাঁড়াবেন এবং (জাহান্নামীদের জন্য) শাফাআত করবেন। রাসূলদেরকে বলা হবে আপনারা যান, এবং যাদেরকে চিনেন তাদেরকে (জাহান্নাম) থেকে বের করে আনেন। অতপর রাসূলগণ এমন কিছু লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন যারা আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে গেছে। তাদেরকে নদীতে নিক্ষেপ করা হবে এবং সাদা ক্কড়ার মতো হয়ে বের হবে।............................ অবশেষে যাদের অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে তাদেরকে রাসূলগণ শাফাআত করে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে নিবেন। তাদের গর্দানে লিখা থাকবে عتاء الله  মহান আল্লাহ কর্তৃক মুক্ত।
মুসনাদে আহমদ ও তাবারানীতে বর্ণিত আছে- রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে মুক্তি প্রদান করবেন। অতপর ফিরিশতা, নবীগণ, সিদ্দিকীন ও শহীদগণকে শাফাআতের অনুমতি দিবেন।

আউলিয়াদের শাফাআত
তিরমিযী শরীফে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বণিূত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন- আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক আছেন যারা তাদের সমর্থক ও অনুসারীদের শাফাআত করবেন। কিছু লোক আছেন যারা তাদের গোত্রের জন্য শাফাআত করবেন, আর কিছু লোক আছেন যারা একটি দলের জন্য শাফাআত করবেন। আর কিছু লোক আছেন যারা একক জনের জন্য শাফাআত করবেন, এভাবে সবাই জান্নাতে যাবে।

হাফিযে কুরআনদের শাফাআত
তিরমিযী শরীফে হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পাঠ করল এবং হিফয করল, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা্েবন এবং তার বংশধর থেকে এমন দশজনকে তার শাফাআতে জান্নাতে দিবেন যাদের উপর জাহান্নাম অবধারিত। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন